• ‌আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে উত্তপ্ত ধুলিয়ান পুরসভা ...
    আজকাল | ০৯ জুলাই ২০২৪
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক:‌ সরকারি আবাস যোজনায় ঘর পাওয়ার জন্য তৃণমূল কাউন্সিলরদের মোটা টাকা দিতে হচ্ছে– এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে উঠেছে মুর্শিদাবাদে সামশেরগঞ্জ থানার অন্তর্গত ধুলিয়ান পুরসভা এলাকা। 

    অভিযোগ উঠেছে ২১ আসন বিশিষ্ট ধুলিয়ান পুরসভা এলাকায় একাধিক উপভোক্তাকে সরকারি প্রকল্পে ঘর পাওয়ার জন্য তৃণমূল কাউন্সিলরদের একবারে ২০–২৫ হাজার টাকা নগদ দিতে হচ্ছে। যদিও বিরোধী দলগুলোর তোলা এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে ধুলিয়ান পুরসভা কর্তৃপক্ষ। তাদের বক্তব্য টাকা বন্টনের ক্ষেত্রে কোথাও কোনও অস্বচ্ছতা নেই। 

    গত পুরসভা নির্বাচনে ২১ আসন বিশিষ্ট ধুলিয়ান পুরসভায় ৭ টি আসনে জয়ী হয় কংগ্রেস প্রার্থীরা। তিনটি আসন জেতেন নির্দল প্রতীকের প্রার্থীরা। বাকি ১১ টি আসনে জয়লাভ করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীরা। 

    তবে পরবর্তীকালে ১০ জন বিরোধী দলের কাউন্সিলর তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। তার ফলে এখন ধুলিয়ান পুরসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে রাজ্যের শাসক দলের। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ এই সুযোগ নিয়ে ধুলিয়ান পুরসভায় আবাস যোজনার ঘরের টাকা বিতরণের ক্ষেত্রে দেদার লুট চালাচ্ছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। 

    ধুলিয়ান পুরসভার ২, ৩, ১৩, ১৫, ১৯ সহ আরও একাধিক ওয়ার্ডে তৃণমূল কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে আবাস যোজনার ঘর দেওয়ার জন্য উপভোক্তাদের কাছ থেকে টাকা চাওয়া বা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। যদিও শাসকদলের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে কেউই প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানাতে পারেননি। তবে আবাস যোজনার ঘর পাওয়ার আশায় নিজেদের পুরনো বাড়ি ভেঙে অনেকেই এখন স্থানীয় ক্লাবে বা আত্মীয়দের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। 

    প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আবাস যোজনার ঘর তৈরির জন্য রাজ্য ও কেন্দ্র যৌথভাবে উপভোক্তাকে প্রায় তিন লক্ষ আটষট্টি হাজার টাকা দিয়ে থাকে। ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলার পর উপভোক্তার কাছে পাঁচটি চেক পৌঁছে যায় এবং পাঁচবারে উপভোক্তা ঘর তৈরির সেই টাকা তুলে নিতে পারেন। 

    ধুলিয়ান টাউন তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি বাবলু মণ্ডল অভিযোগ করেন, ‘‌গত কয়েক বছর ধরে আবাস যোজনার দুর্নীতি ধুলিয়ান পুরসভায় লাগাম ছাড়িয়েছে। কতজন উপভোক্তার কত টাকা তাদের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে, এই বিষয়ে পুরসভার ফিনান্স অফিসার থেকে চেয়ারম্যান একাধিক ব্যক্তিকে চিঠি দিয়েও তার কোনও উত্তর পাইনি।’‌ 

    তিনি অভিযোগ করেন, ‘‌উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার পরেই তৃণমূল কাউন্সিলর বা তাঁর লোকেরা চেকগুলো নিজেদের হেফাজতে নিয়ে নেন। এরপর উপভোক্তা কুড়ি থেকে পঁচিশ হাজার টাকা নগদ দিলে তবেই তাদের অ্যাকাউন্টে পরবর্তী কিস্তির টাকা ঢুকছে।’‌ তাঁর অভিযোগ, ‘‌ধুলিয়ান পুরসভার অধীনে সরকারি আবাস যোজনায় প্রায় সাড়ে আট হাজার বাড়ি তৈরির কাজ চললেও এখনও পর্যন্ত মাত্র সাতশোর কাছাকাছি বাড়ির কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু ইতিমধ্যেই তৃণমূল কাউন্সিলররা ষষ্ঠ তালিকায় নাম তোলার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে নগদ টাকা তোলা শুরু করে দিয়েছেন।’‌  

    সামশেরগঞ্জ বিধানসভা এলাকার বিজেপির আহ্বায়ক প্রবীর সাহা বলেন, ‘‌প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ঘর দেওয়ার নামে ধুলিয়ান পুরসভা এলাকায় লুঠতরাজ চলছে। প্রত্যেক কাউন্সিলর উপভোক্তাদের কাছ থেকে অন্তত ২০–২৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। আমার এক আত্মীয়কেও সেই টাকা দিতে হয়েছে।’‌ তিনি বলেন, ‘‌কাউন্সিলাররা ২৫ হাজার টাকা দিয়ে উপভোক্তাকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলাচ্ছেন এবং আলাদা করে ২০–২৫ হাজার টাকা নিজেরা রেখে দিচ্ছেন। তারপরেই উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকছে।’‌ 

    যদিও টাকা তোলার এই অভিযোগ অস্বীকার করে ধুলিয়ান পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সুমিত সাহা বলেন, ‘‌২০২১–২২ অর্থবর্ষের আগে আবাস যোজনার ঘর তৈরির জন্য উপভোক্তাকেই ২৫ হাজার টাকা তার অ্যাকাউন্টে জমা রাখতে হত। যা দিয়ে তার বাড়ির ভিত এবং আনুষঙ্গিক কাজ করা হত। কিন্তু পরবর্তীকালে সরকার এই নিয়ম বাতিল করে দেয়।’‌ 

    তিনি বলেন, ‘‌ধুলিয়ান পুরসভা এলাকায় ২০২১–২২ অর্থবর্ষের আগের বহু বাড়ি নির্মাণের কাজ এখনও চলছে। কিন্তু অনেক উপভোক্তা তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রয়োজনীয় অর্থ জমা করেননি। কাউন্সিলররা সেই টাকা জমা করতে বলেছেন। এর মধ্যে কোনও আর্থিক বেনিয়ম নেই।’‌ 
  • Link to this news (আজকাল)