• ভালোবেসে বিয়ে করায় খুন করতে চান বাবা-মা! হাই কোর্টের কাছে নিরাপত্তা চাইলেন তরুণী
    প্রতিদিন | ০৯ জুলাই ২০২৪
  • গোবিন্দ রায়: ভালোবেসে বিয়ে করায় নিজের মেয়েকেই মেরে ফেলতে চান বাবা-মা! প্রেমের টানে ঘর ছাড়া তরুণীর এহেন আশঙ্কায় বিস্মিত কলকাতা হাই কোর্ট। মামলার শুনানি চলাকালীন বিস্ময় প্রকাশ করে, এ তো ‘অনার কিলিং’ বলে আদালতের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে মন্তব্য করেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা।

    এখন সে সাবালিকা। প্রেমের টানে নিজের ঘর বাঁধবে বলে বাবার ঘর ছেড়ে ছিল সঙ্গীর হাত ধরে। কিন্তু ছোট্ট মেয়েটি যে কবে বড় হয়ে গেল তা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি বাবা-মা। তাই তাঁদের মেয়েকে অপহরণ করা হয়েছে এই অভিযোগে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ইসলামপুরের বাসিন্দা ওই দম্পতি। সোমবার সেই মামলার শুনানি ছিল বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে। আদালতে তরুণীর বাবা-মায়ের আইনজীবী প্রসেনজিৎ দেবনাথ ও পৃথা বিশ্বাসের অভিযোগ, “তাঁদের মেয়েকে অপহরণ করে আটকে রাখা হয়েছে বলে দাবি করেছেন আবেদনকারীরা। কিন্তু পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করছে না বলে অভিযোগ। গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে তাঁদের মেয়ে ঘরছাড়া। এপর্যন্ত পুলিশ উদ্ধার করে উঠতে পারেনি।” আবেদনকারীদের এই অভিযোগের প্রেক্ষিতেই উঠে আসে পালটা অভিযোগ। আসে ‘অনার কিলিং’ তত্ত্ব। নিজেদের সম্মান রক্ষায় সন্তানকে খুন করার মতো এরকম গুরুতর পালটা অভিযোগ শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা।

    আদালতের নির্দেশে এজলাসে হাজির করানো হয় বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া ওই তরুণীকে। তাঁর আশঙ্কা, প্রেম করে বিয়ে করায় বাড়ির লোক তাঁকে খুন করবে। নিজের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ শুনেই ‘অনার কিলিং’ বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি। ২৮ জুন মামলার প্রথম শুনানিতে আদালতে রাজ্য জানায়, মেয়েটি স্বেচ্ছায় গিয়েছিল। তিনি বাড়িতে ফিরতে আপত্তি করছেন। বিচারপতি তাই শুনে মেয়েটিকে এজলাসে হাজির করাতে ইলামবাজার থানার পুলিশকে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি, মেয়েটির যাতে কোনও ক্ষতি না হয় পুলিশকে তাও নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। নির্দেশ ছিল, মেয়েটি কোনও সমস্যায় পড়লে পুলিশকে জানাবে। আদালতের নির্দেশ মতো মেয়েটিকে এজলাসে হাজির করা হয়।

    সরকারি আইনজীবী সুমন সেনগুপ্ত আদালতে জানান, “মেয়েটি তাঁর বাবা-মায়ের বাড়িতে ফিরতে চায় না। কারণ বাড়ি ফিরলে বাবা তাঁকে খুন করে ফেলবে বলে তাঁর আশঙ্কা।” মেয়েটি জানিয়েছে, এর মধ্যে তাঁর প্রেমিকের বাড়ি গিয়ে কার্যত হামলা করে তাঁর বাবা এবং অন্যরা। নৃশংসভাবে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। এদিন অবশ্য মেয়েটি আদালতে আবেদন করে, যাতে তার বাবা-মা কোনও ভাবে ওই বাড়ি গিয়ে অত্যাচার করতে না পারে সেই নির্দেশ দিক আদালত। তার প্রেক্ষিতে বিচারপতি সিনহা জানিয়েছেন, ওরা নিজেদের মত থাকবে। তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে পুলিশ। তারা কোনও সমস্যায় পড়লে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়ে মামলার নিষ্পত্তি করে দিয়েছে আদালত।
  • Link to this news (প্রতিদিন)