গঙ্গার ভাঙনের গ্রাসে খাস কলকাতার একাধিক বাড়ি, সর্বস্ব হারিয়ে ত্রাণশিবিরে বাসিন্দারা
প্রতিদিন | ০৯ জুলাই ২০২৪
অভিরূপ দাস: বাড়ি ছিল। আর নেই। গিলে নিয়েছে গঙ্গা। মালদহ মুর্শিদাবাদের কথা নয়। কলকাতা পুরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডে জনবহুল এলাকায় গঙ্গার ভাঙনে ছাদ হারিয়েছে একাধিক পরিবার। আপাতত তারা রয়েছে পুরসভার স্কুলে। এমন ঘটনায় উঠছে প্রশ্ন। গঙ্গার দুপার কি ক্রমশ ভাঙছে? কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের সহকারী অধ্যাপক ড. পুনর্বসু চৌধুরি জানিয়েছেন, নদীর গতিপথ চিরকাল এক থাকে না। আপন খেয়ালে সে বয়ে যাবে। গঙ্গার গতিপথও বদলে গিয়েছে একাধিকবার। আগামীতে গঙ্গার গতিপথ যে পরিবর্তন হবে না এমনটা নিশ্চিত করে বলা যায় না।
কলকাতা পুরসভা (Kolkata Municipal Corporation) সূত্রে খবর, রতনবাবু ঘাটের এই ভাঙনে একসঙ্গে বারোটি বাড়ি তলিয়ে গিয়েছে। পরিবেশবিজ্ঞানীরা বলছেন, গঙ্গার দুতীরের আকস্মিক ভাঙন ঠেকাতে পর্যাপ্ত গাছ লাগাতে হবে। ড. পুনর্বসু চৌধুরির কথায়, “কংক্রিটের বাঁধ দিয়ে নদী ভাঙন ঠেকানোর চেয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ গাছ লাগিয়ে তা ঠেকানো শ্রেয়। গাছই পারে দুতীরের মাটিকে শক্ত করে ধরে রাখতে।”
দ্বিতীয়ত আরেকটি জিনিসে গুরুত্ব দিতে বলেছেন পরিবেশবিদরা। ডা. চৌধুরীর কথায়, নদীর দুপারের মাটি নরম। সেখানে কোনওভাবেই বাড়ি করা যাবে না। তা স্থিতিশীল নয়। ভাঙন থেকে বাঁচতে হলে নদীর দুপারের নরম পলি অনেকটা ছেড়ে দূরে বাসস্থান তৈরি করতে হবে। নয়তো কলকাতা পুরসভার চন্দ্রকুমার রায় লেনের মতোই হবে।
সম্প্রতি রতনবাবু ঘাট এলাকার এই এলাকা থেকেই মেয়রের দ্বারস্থ হন মণি বিশ্বাস। চন্দ্রকুমার রায় লেনের বাসিন্দার কথায়, গঙ্গার ভাঙনে তলিয়ে গিয়েছে বাড়ি। তার পর থেকেই সরকারি স্কুলে বসবাস। এবার উপায়?
ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, অতি শীঘ্রই এদের বাংলার বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে।
সমস্যা সমাধানে ওই বরোর চেয়ারম্যান তরুণ সাহার সঙ্গে আলোচনা সেরেছেন মেয়র। তিনি বলেন, “একটা জায়গা পাওয়া গিয়েছে। সেখানেই হবে বাংলার বাড়ি। গঙ্গার ভাঙনে যাঁদের বাড়ি তলিয়ে গিয়েছে তাঁরা মাথার ছাদ পাবেন।
কেন এতদিন স্কুলবাড়িতে থাকতে হল? তার জন্য দীর্ঘ নির্বাচনকেই দায়ী করেছেন মেয়র। টানা আড়াই মাস ধরে লোকসভা নির্বাচন চলেছে। এই সময় নির্বাচনী বিধি লাগু থাকার দরুন কোনও কাজ করা যায় না। ফিরহাদের কথায়, “প্রতিটি নির্বাচনের সময় সরকারি কাজ থমকে থাকে। উত্তর কলকাতায় জমি পাওয়াও একটা সমস্যা। উত্তর কলকাতায় যাদের বাড়ি গঙ্গার গর্ভে তলিয়ে গিয়েছে তারা পাটুলি কিংবা বেহালায় থাকবেন না। তাই ওই এলাকাতেই জমি খোঁজা হচ্ছিল।”
এদিকে পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী জানিয়েছেন, সুন্দরবন এলাকায় প্রতি বছর ৩-৭ মিলিমিটার পর্যন্ত জলস্তর বাড়ছে। যার জন্য দায়ী বিশ্ব উষ্ণায়ন। এই বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য নদীর জলের পিএইচ মাত্রারও হেরফের ঘটছে। এখনই সতর্ক না হলে বিপদে পড়বেন নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা।