অতিমারী পর্বে মাঝেমধ্যেই দেখা যেত এমন নজির। কিন্তু তার পরে আর তেমন দেখা যায়নি আসন্নপ্রসবার থেকে তাঁর গর্ভস্থ সন্তানের মধ্যে করোনার সংক্রমণ ছড়ানোর ঘটনা। এবার তেমনই এক সংক্রমিত সদ্যোজাতকে প্রায় মৃত্যুমুখ থেকে ফিরিয়ে আনলেন শহরেরই একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা।সিভিয়ার হার্ট ফেলিয়োর এবং ভয়াবহ শ্বাসকষ্টে ভোগা একরত্তিকে কোভিডের চালু চিকিৎসা দিয়ে সারিয়ে তুললো সিএমআরআই হাসপাতাল। আপাতত বিপন্মুক্ত সেই শিশুকন্যা। অক্সিজেন বন্ধ না হলেও দ্রুত সেরে উঠছে ওই নবজাতক। দক্ষিণ ২৪ পরগনার পৈলানের বাসিন্দা বছর চব্বিশের জয়া দে মোদক যখন আসন্নপ্রসবা, তখনই তাঁর জ্বর-সর্দি-কাশির উপসর্গ ছিল।
গত ২ জুন ডায়মন্ড হারবার রোডের উপর বেহালার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। জন্মের পরই জ্বর-সর্দির উপসর্গ দেখা দেয় সদ্যোজাতেরও। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে উপসর্গ। শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। হার্ট ফেলিয়োরেরও লক্ষণ দেখা দেয়। কমতে থাকে রক্তচাপ। ঝুঁকি না নিয়ে তড়িঘড়ি ১৩ জুন একরত্তিকে স্থানান্তর করা হয় সিএমআরআই-তে।
একবালপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা প্রথমেই শ্বাসকষ্ট ও হার্ট ফেলিয়োরের চিকিৎসা শুরু করে দেন। দেওয়া হয় ভেন্টিলেশনেও। এ যাবৎ জানা ছিল না জয়া বা তাঁর মেয়ের করোনা হয়েছে কিনা। সন্দেহ হওয়ায় দু’ জনেরই কোভিড অ্যান্টিবডি টেস্ট করে রিপোর্ট পজ়িটিভ মেলে। মায়ের পাশাপাশি একরত্তিরও কোভিড হয়েছে দেখেই তার চিকিৎসক, সিএমআরআই-এর শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ শান্তনু রায় করোনার প্রথাগত চিকিৎসা শুরু করে দেন।
তাঁর কথায়, ‘মা সেরে গিয়েছিলেন। কিন্তু বাচ্চাটির অবস্থার অবনতি ঠেকানো যাচ্ছিল না। আমরা বুঝতে পারি, গর্ভে থাকাকালীনই সে মায়ের থেকে করোনায় সংক্রমিত হয়েছে। সাম্প্রতিক কালে এমনটা প্রায় বেনজির। ওই শিশুর হার্টের অবস্থাও ভালো ছিল না। কোভিড নিউমোনিয়া রয়েছে বুঝতে পেরেই ইন্ট্রাভেনাস গামা এবং স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন দিতে শুরু করি। তাতেই ম্যাজিকের মতো কাজ হয়। তখন তার সপ্তাহ তিনেক বয়স।’
এর পর আর সমস্যা হয়নি। ফুসফুস সেরে ওঠার সেই পর্বে হার্টেরও উন্নতি লক্ষ্যণীয় ছিল। ৩০ জুন হাসপাতাল থেকে ছুটি পায় একরত্তি। অবশ্য বাড়িতেও তার অক্সিজেন সাপোর্ট খোলা হয়নি। এক সপ্তাহের মাথায় গত শুক্রবার ফের একবালপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতালে চেক-আপে আনা হয় ওই শিশুকে। শান্তনুবাবু জানান, দ্রুত উন্নতি হচ্ছে তার। এবারে অক্সিজেনও খুলে দেওয়া হবে।
শিশুর বাবা তাপস মোদক বলেন, ‘যে ভাবে আমার সন্তানকে ডাক্তারবাবুরা বাঁচিয়ে তুললেন, তাতে ওঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা নেই আমাদের।’ আর চিকিৎসকরা বুঝলেন, অতিমারী মিটে গেলেও মায়ের থেকে গর্ভস্থ সন্তানের সংক্রমণ (ভার্টিক্যাল ইনফেকশন), হতেই পারে।