খরচ কমিয়ে মানুষের কাছে পরিষেবা পৌঁছে দিতে রাজ্য সরকার পিপিপি মডেলে বেশ কিছু সরকারি বাসকে বেসরকারি হাতে তুলে দিতে চলেছে। প্রথম দফায় চার সরকারি রুটের প্রায় ৫৮টি বাস বেসরকারি হাতে চুক্তির ভিত্তিতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীর দাবি, ‘এই মডেল সফল হলে আরও বেশ কয়েকটি রুটের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’দূষণের কারণে আদালতের নির্দেশে পুজোর আগেই বৃহত্তর কলকাতা থেকে বিভিন্ন রুটের দেড় হাজারের বেশি বাস-মিনিবাস বাতিল হয়ে যাচ্ছে। পেট্রল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি হলেও ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে রাজ্য সরকারের অনমনীয় মনোভাবের জন্য বেসরকারি বাস মালিকরা নতুন করে বিনিয়োগে আর আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ফলে যে হারে পুরোনো বাস বসে যাচ্ছে সেই অনুপাতে নতুন বাস পথে নামছে না।
সরকারি বাসও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির জেরে কোভিডের পর থেকেই কমে গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ নিগম এজন্য চালক ও কন্ডাক্টরের অভাবকেও দায়ী করছে। একাধিক চালক ও কন্ডাক্টর অবসর নিলেও নতুন নিয়োগ বন্ধ। এই পরিস্থিতিতে সাত-আট বছরের পুরোনো বহু সরকারি বাস ডিপোতে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। যা স্ক্র্যাপ করে বিক্রি করা ছাড়া আর কোনও পথ নেই নিগমের কাছে।
তাই মেরামত করে বেসরকারি বাস মালিকদের দিয়ে এই গাড়িগুলি সরকারি রুটে চালাতে পিপিপি মডেলকে কাজে লাগাচ্ছে নিগম। প্রথম দফায় সি-২৬(বারুইপুর-হাওড়া) রুটের ১৪টি ,সি-৮(বারাসত-জোকা) রুটের ১৬টি এবং এস-৪৭(ইডেনসিটি-হাওড়া) রুটের ১৮টি বাস বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এরপরেই ১১এ (দমদম স্টেশন-হাওড়া) রুটের ১০ টি বাস সহ আরও কয়েকটি সরকারি রুটকেও বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
মালিকরা নিজস্ব ভাড়ায় এই রুটে সরকারি বাসগুলি চালাবে নিজেদের কন্ডাক্টর ও চালক দিয়ে। অর্থাৎ বেসরকারি বাসে যে হারে ভাড়া নেওয়া হয়, সেভাবেই। শর্ত হলো, বাস মালিকদের এজন্য পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ নিগমের কাছে প্রতিটি বাসের জন্য এককালীন ৫০ হাজার টাকা ডিপোজিট রাখতে হবে। মাসে নিগমকে বাস পিছু ভাড়া দিতে হবে দশ থেকে পনেরো হাজার টাকা। তবে বেসরকারি হাতে বাসগুলি তুলে দেওয়া হলে রাতে তা সরকারের নির্দিষ্ট ডিপোতেই রাখতে হবে।
এমনকী, বাসগুলি রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে ইঞ্জিনিয়ারের বড় কোনও সমস্যা দেখা দিলে নিগমের নিজস্ব গ্যারাজেই তা মেরামতি করা হবে।
পরিবহণ মন্ত্রী বলেন, ‘এতে নিগমের লাভ হবে। কারণ অনেক চেষ্টা করেও বাস থেকে চুরি বন্ধ করা যায়নি। এক শ্রেণির চালক ও কন্ডাক্টর মিলে যাত্রীদের টিকিট না দিয়ে আদায় হওয়া ভাড়ার টাকা পকেটস্থ করে নেন। ফলে বাস চালিয়ে তেলের খরচও ওঠে না। পিপিপি মডেলে গাড়ি চালালে কোনও খরচ না করে বাস পিছু মাসে একটা নির্দিষ্ট টাকা নিগম পাবে।'