• দেশ বিদেশের জগন্নাথ চর্চায় অক্লান্ত মকবুল
    আজকাল | ১০ জুলাই ২০২৪
  • সব্যসাচী সরকার: এ বছরই প্রথম জাপানে রথের রশিতে টান দিয়েছেন সেখানকার মানুষেরা। থাইল্যান্ডেও হয়েছে রথযাত্রা। শুধু ওড়িশা নয়, বাংলা, বাংলাদেশ থেকে শুরু করে সুদূর জাপান, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়াতেও দীর্ঘদিন ধরেই চর্চা শুরু হয়েছে জগন্নাথদেবকে নিয়ে। সাহিত্য ও সমাজজীবনে দারুব্রহ্মের প্রভাব নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন কলকাতারই এক অধ্যাপক। সেন্ট পলস কলেজের বাংলা ভাষার অধ্যাপক ড.‌ শেখ মকবুল ইসলাম। বাংলা ও ওড়িশার সাংস্কৃতিক বৃত্তে রথযাত্রা, চৈতন্য আমল থেকে অবিভক্ত বাংলায় জগন্নাথদেবের যে চর্চা, তা নিয়েই এবার একসঙ্গে চারটি বই প্রকাশিত হতে চলেছে। তিনি বইগুলির লেখক।

    প্রথম জীবনে ডক্টরেটের থিসিস হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন বাংলা ও ওড়িশার লোকসাহিত্যের তুলনামূলক আলোচনা। গবেষণা করতে করতে তিনি দেখেন, জগন্নাথদেব শুধু পুরীর মন্দিরে পূজিত হন না, বাংলা–‌ওড়িশার সমাজজীবনেও তঁার গভীর প্রভাব। কবিতা থেকে শুরু করে গান, এমনকী সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও দারুব্রহ্মের উপস্থিতি। জগন্নাথদেবের রহস্য অনুসন্ধান শুরু ১৯৯২ সাল থেকে। শেখ মকবুল ইসলাম জগন্নাথদেব সম্পর্কে বিভিন্ন সূত্র থেকে নানা তথ্য সংগ্রহ করেন। হাতে আসে জগৎমঙ্গল এবং জগন্নাথ মঙ্গল নামে দুটি কাব্যগ্রন্থ। মধ্যযুগে জগন্নাথদেবের যে প্রভাব সমাজজীবনে, তার উল্লেখ রয়েছে। একটি কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা কাশীরাম দাসের ভাই গদাধর দাস। অন্যটি বিশ্বম্ভর দাস। এই কাব্যগ্রন্থ দুটির মধ্যে পৌরাণিক দিকটি নিয়ে গবেষণা করেছেন তিনি।

    জগন্নাথ–‌মাহাত্ম্য খুঁজতে একশোবারেরও বেশি ছুটতে হয়েছে তাঁকে ওড়িশায়। পুরীতে তো বটেই। জানালেন, হাওড়া জেলাতেও জগন্নাথদেবের পুজো, রথযাত্রা ইত্যাদি নিয়ে একটি বই প্রকাশিত হতে চলেছে। সন্দীপ বাগ লিখেছেন, হাওড়া জেলায় জগন্নাথ–‌সংস্কৃতি নিয়ে। বইটির মুখবন্ধ লিখেছেন শেখ মকবুল ইসলাম। তঁার লেখা বইগুলি একসঙ্গে আগামী ১৪ জুলাই প্রকাশিত হবে। বইগুলির নাম:‌ শ্রী জগন্নাথ নানাস্থানে, অন্বেষণে। দ্বিতীয় বইটি হল জগৎ–‌মঙ্গল জগন্নাথমঙ্গল তৌলনিক পর্যবেক্ষণ, তৃতীয়টি শ্রীজগন্নাথ চর্চায় ও চিন্তনে। হাওড়া জেলার জগন্নাথ–‌সংস্কৃতি বইটিও সেদিনই প্রকাশিত হবে।

    শেখ মকবুল ইসলামের পিএইচডি এবং ডি–‌লিটের বিষয় জগন্নাথদেবই। জানালেন একটি অন্য তথ্য। দক্ষিণ ও দক্ষিণ–‌পূর্ব এশিয়া জুড়েই জগন্নাথ–‌চর্চা চলছে। মায়ানমার, নেপাল, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ফিলিপিনস, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া— সর্বত্রই জগন্নাথদেব আছেন চর্চায় এবং সংস্কৃতিতে। জগন্নাথদেবের এশিয়া মহাদেশে চর্চার মূলে বৌদ্ধ প্রভাব রয়েছে। যেমন বাংলায় চৈতন্য–‌পরবর্তী সময়ে জগন্নাথদেবকে নিয়ে চর্চা আরও ছড়িয়ে পড়েছে বাংলার গ্রামজীবনে। রয়েছে বহু গান এবং লৌকিক ব্যাখ্যা।

    ১৪ জুলাই বাগবাজারের গৌড়ীয় মিশনের অডিটোরিয়ামে বইগুলি সর্বসমক্ষে আসতে চলেছে।
  • Link to this news (আজকাল)