চারিধারে জল, মাঝে ছোট্ট দ্বীপ। সেখানেই রয়েছে একটি স্কুল। এটা কোনও ভ্রমণ স্থান নয়, একটি ভোট কেন্দ্র। চারিধারে জলবেষ্টিত এই বুথে নৌকা ভাড়া করে ভোট দিতে এলেন এলাকাবাসীরা। বন্যা কবলিত এলাকায় এরকমই ভোটচিত্র দেখা গেল উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের দুটি বুথে।ফি বছরের বন্যা পরিস্থিতি নিত্যসঙ্গী ওই এলাকার মানুষের। প্রতি বছর প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়। বিভিন্ন নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলেগুলির পক্ষ থেকেও সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় নি বলে দাবি গ্রামবাসীদের। গতকাল রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে রায়গঞ্জ ব্লকের গৌরীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অনন্তপুর প্রাইমারি স্কুল বুথকেন্দ্রটি কার্যত বিচ্ছিন্ন দ্বীপের আকার ধারণ করেছে।
প্রশাসন ও নেতারা কথা না রাখলেও এলাকার বাসিন্দারা নিয়ম মেনে ভোট দিতে গেলেন। এর পাশাপাশি রায়গঞ্জ বিধানসভার বিভিন্ন এলাকায় বিজেপি, তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে অভিযোগ পালটা অভিযোগ থাকলেও এই অনন্তপুর এলাকার বাসিন্দারা রাজনৈতিক সম্প্রীতির এক নজির স্থাপন করেছেন। রাজনৈতিক মতাদর্শকে বাদ দিয়ে এলাকার বাসিন্দারা নিজেরাই চাঁদা তুলে নৌকা ভাড়া করে, কলাগাছ দিয়ে ভেলা বানিয়ে জলমগ্ন এলাকা পার হয়ে ভোট দিতে গেলেন।
রায়গঞ্জ শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে গৌরী গ্রাম পঞ্চায়েতে অনন্তপুর প্রাইমারি স্কুল। বিধানসভার উপনির্বাচনে রায়গঞ্জ আসনের ৩৭ ও ৩৮ নম্বর বুথ এই স্কুলেই হয়েছে। একনজরে ওই বুথটিকে দেখলে দ্বীপের মতো মনে হতে পারে অনেকেরই। বুথের ঢোকার মুখে প্রায় একহাঁটু জল। বুথের একপাশে অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে প্রায় ২৫/৩০ টি বাড়ি। বুথে ঢোকার মুখে ওই জলমগ্ন জায়গা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাঁশের একটি মাচা বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বুথের অন্যদিকে বিস্তীর্ণ চাষের জমি। বর্তমানে সেগুলি জলের তলায়। দূরে দূরে বেশকিছু বাড়ি দেখা যাচ্ছে। উঁচু এলাকার বাসিন্দারা ওই বাঁশের মাচা পেরিয়ে ভোটকেন্দ্রে যায়। পাশাপাশি ওই জলমগ্ন এলাকা পেরিয়ে বিভিন্ন রুট ধরে অনেক মানুষ নৌকা, ভেলা চেপে ভোটকেন্দ্রে হাজির হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘জলস্তর অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। সেই কারণে অনেককেই নৌকা করে আসতে হচ্ছে। বুথের মধ্যেও জল ভর্তি। মাচা তৈরি করা হয়েছে। সেই জন্যেই মানুষ এসে ভোট দিতে পারছে। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য মহম্মদ সিদ্দিক বলেন, ‘আমাদের তো বন্যা কবলিত এলাকা। বন্যার সময়েই এই ভোটটা হচ্ছে। আমরা বিষয়টি পঞ্চায়েতকে জানিয়েছিলাম। তাঁরা একটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করে দিয়েছে।’