প্রসূতি সময়ে পৌঁছতে পারছেন না স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে, বাধা কি রাস্তার দুরবস্থা?...
আজকাল | ১১ জুলাই ২০২৪
আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাস্তার দুরবস্থা। সব জায়গায় নয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ এলাকার বেশ কিছু অংশে। যেখানে রাস্তার 'স্বাস্থ্য' এতটাই খারাপ যে গাড়ি বা অ্যাম্বুল্যান্স ঢুকতে পারে না। বিশেষ করে সময়টা যদি বর্ষাকাল হয় তবে অবস্থাটা খুবই সঙ্গীন হয়ে ওঠে। ফল হিসেবে বর্ষার সময় হয় নৌকা বা কলার ভেলা ভরসা অথবা গ্রামেই ওপরওয়ালার ভরসায় চিকিৎসা। তাতে রোগী বা প্রসূতি বাঁচতেও পারে বা মরতেও পারে। পূর্ব জন্মের 'পাপের ফল' হিসেবেই নিজেদের স্বান্তনা দেন গ্রামবাসীরা। উদাহরণ হিসেবে উঠে আসে মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের তুলসীহাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের ছোটপারো নামে একটি গ্রাম। যেখানে ক্যানেলে অন্য সময় জল কম থাকার জন্য অস্থায়ী মাটির রাস্তা তৈরি করে সেখান দিয়েই যাতায়াত করেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু বর্ষায় ক্যানেল পূর্ণ হতেই এলাকায় তৈরি হয় বন্যার মতো পরিস্থিতি। সেতু না থাকায় বাইরের জগতের সঙ্গেও যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন। যাতায়াতের ভরসা বাঁশের একটি সাঁকো। ভাগ্য সহায় থাকলে তার সাহায্যে কেউ পার হয়ে যেতেও পারেন আবার কেউ বা জলে পড়ে খাবিও খেতে পারেন। গ্রামবাসীদের দাবি, ৪০ বছর ধরে সেতুর দাবি করলেও জুটেছে ওই সাঁকো। অথচ ভোট গেছে এবং এসেছে। প্রার্থীরা এসেছে ও গেছে। রাজ্যে সরকারেরও পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু পরিবর্তন হয়নি তাঁদের ভাগ্যের। তাই বর্ষায় তাঁদের ভরসা কলার ভেলা। যার সাহায্যে সাধারণ মানুষ থেকে রোগী সবাই পারাপার করেন। রাস্তার অভাবে অ্যাম্বুল্যান্স ঢুকতে না পারায় বাড়িতেই অনেক সময় প্রসব করেন প্রসূতিরা। এটা শুধু একটা খন্ডচিত্র। কলকাতা থেকে দূরবর্তী বিভিন্ন জেলা রয়েছে সেখানেও একই দৃশ্য। রাস্তার অভাবে অনেক জায়গায় অ্যাম্বুল্যান্স দূরে দাঁড়িয়ে থাকে। রোগীকে অ্যাম্বুল্যান্স পর্যন্ত নিয়ে আসাটাই একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় তাঁর বাড়ি বা গ্রামের লোকের কাছে। গত লোকসভা নির্বাচনে বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেসের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন মিলটন রশিদ। তাঁর অভিযোগ, 'খারাপ রাস্তা এবং অ্যাম্বুল্যান্স ঢুকতে না পারায় বাড়িতেই বাধ্য হয়ে রোগীর চিকিৎসা করাটা রাজ্যে কোনও নতুন ঘটনা নয়। এই বোলপুর শহরের আশপাশেই এমন এমন জায়গা আছে যেখানে অ্যাম্বুল্যান্স ঢুকতে পারে না। সঙ্কটকালে কীভাবে তাঁরা চিকিৎসা পান সেটা সহজেই অনুমেয়। আর রাজনীতি করার সুবাদে বহু জায়গায় গিয়েছি। দেখেছি গ্রামের রাস্তার কী করুন অবস্থা। তা সে মুর্শিদাবাদই হোক বা দক্ষিণ ২৪ পরগণাই হোক। এটাই 'এগিয়ে বাংলা।' অথচ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বা রাজ্য সরকারের তরফে রাজ্যে প্রসূতি মা ও শিশুমৃত্যু রুখতে নেওয়া হয়েছে একাধিক পদক্ষেপ। রাস্তার উন্নয়নে নেওয়া হয়েছে 'পথশ্রী' প্রকল্প। কিন্তু তার সুফল কেন সব জায়গায় যাচ্ছে না? হরিশ্চন্দ্রপুরের ঘটনায় রাজ্যের মন্ত্রী ও স্থানীয় বিধায়ক তাজমুল হোসেন জানিয়েছেন, ঘটনাটা তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন। কিন্তু রাজ্যের বাকি অংশ? রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, 'বর্তমান রাজ্য সরকার ২১ হাজার কিলোমিটার রাস্তা গড়েছে। তারপরও কিছু কিছু জায়গায় কাজ বাকি আছে। অসুবিধার দিকগুলি যখনই আমাদের নজরে আসছে তখনই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।'