• লক্ষ্য পঞ্চায়েতের কাজে স্বচ্ছতা  জেলায় ঢালাও বদলি কর্মীদের
    বর্তমান | ১১ জুলাই ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: পঞ্চায়েত অফিসে ‘শিকড় গজিয়েছে’ সরকারি কর্মীদের! স্বভাবতই পঞ্চায়েতের কাজকর্মে স্বচ্ছতা ও গতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে জনমানসে। তাই এবার ঢালাও বদলি। নদীয়া জেলা প্রশাসন সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে। শুধু নদীয়া নয়, রাজ্যজুড়েই পঞ্চায়েত কর্মীদের বদলির নির্দেশ এসেছে। সেইমতো প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে প্রতিটি জেলা প্রশাসনে। কোন কর্মী, কত বছর পঞ্চায়েতের সরকারি পদে রয়েছেন, তার‌ তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই বদলির তালিকা প্রকাশ করা হবে। নদীয়া জেলায় প্রাথমিকভাবে একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, জেলার প্রায় শতাধিক পঞ্চায়েত কর্মীর বদলি হতে চলেছে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন পঞ্চায়েতে পাঁচশোরও বেশি সরকারি কর্মী রয়েছেন। বদলির‌ ফলে একদিকে, পঞ্চায়েতের কাজে গতি আসবে। অন্যদিকে, স্বচ্ছতাও আসবে বলে মনে করছে প্রশাসনিক মহল। একই পঞ্চায়েতে‌ বছরের পর বছর বহাল থাকার ফলে উন্নয়নমূলক কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রশ্নে কর্মীদের মধ্যে অনীহার অভিযোগ উঠছিল।


    জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘রাজ্য থেকে পঞ্চায়েত কর্মীদের বদলির নির্দেশ এসেছে। সেইমতো আমরা কাজ করছি। কারা কারা নির্দিষ্ট সময়ের থেকে বেশিদিন পঞ্চায়েতে সরকারি পদে রয়েছেন তাঁদের শীঘ্রই বদলি‌ করা হবে।’ কেউ পঞ্চায়েতের সেক্রেটারি। সেই পদে রয়েছেন দীর্ঘ বছর ধরে। কেউ আবার পঞ্চায়েত সহায়ক পদের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি হয়তো দায়িত্ব সামলানোর নির্ধারিত সময় পার করেছেন অনেক আগেই। বদলি না হওয়ায় কাজ করে চলেছেন পঞ্চায়েতে। কারও তিন বছর পার হয়েছে। কেউ আবার চার বছর পঞ্চায়েতে কাজ করে চলেছেন।‌ এমনও বহু পঞ্চায়েত কর্মী রয়েছেন, যাঁরা পাঁচ বছর ধরে সরকারি পদ আগলে রেখেছেন। যা একপ্রকার বেনজির বলছে সংশ্লিষ্ট মহল। দীর্ঘদিন কাজ করার ফলে পঞ্চায়েতের শাসক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ভালোই বোঝাপড়া তৈরি হয়েছে তাঁদের। এমনও দেখা গিয়েছে, অতীতে বদলির অর্ডার এলেও নেতাদের হাত ধরে তা বাতিলও করিয়েছেন অনেকেই। 


    অনেকে সময় দেখা গিয়েছে, দীর্ঘদিন একই পদে থাকার সুবাদে সরকারি টাকা নয়ছয় বা দুর্নীতিতেও নাম জড়িয়েছে পঞ্চায়েত কর্মীদের। এমনকী পঞ্চায়েত প্রধানের সঙ্গে সেক্রেটারির বনিবনা না হওয়ার ঘটনাও ঘটে থাকে। তাতে ব্যাহত হয় উন্নয়নের কাজকর্ম। নদীয়া জেলাতেও অতীতে এরকম একাধিক ঘটনা ঘটেছে। খোদ পঞ্চায়েত প্রধান জেলাশাসককে চিঠি লিখে পঞ্চায়েতের সেক্রেটারির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে করেছেন। রাজ্যজুড়ে পঞ্চায়েতের সহায়ক বা সচিবদের দীর্ঘদিন বদলি না হওয়ার জন্য বিতর্ক কম হয়নি।


    সম্প্রতি, জেলা প্রশাসনের তরফে পঞ্চায়েতগুলিতে কত টাকা পড়ে রয়েছে, তার হিসেব করা হচ্ছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, বিগত কয়েকটি অর্থ বছরের টাকা সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের কোষাগারে পড়ে রয়েছে। সেই টাকায় কোনও উন্নয়নমূলক কাজ করা হচ্ছে না। প্রতিবছর নতুন ফাণ্ডের উপরই বার্ষিক পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। যার ফলে পুরোনো তহবিল অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকছে। পঞ্চায়েতের প্রধানও জানেন যে তাঁর পঞ্চায়েতের টাকা পড়ে নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু তাঁর কিছু করার থাকছে না। কেননা, মূলত এই কাজগুলি সেক্রেটারি কিংবা সহায়করাই করে থাকেন। পঞ্চায়েতের উন্নয়নমূলক কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। কিন্তু দীর্ঘকাল একই পদে থেকে পঞ্চায়েত কর্মীদের কাজের প্রতি অনীহা সামনে আসছে। এমনটাই মনে করছে প্রশাসনিক মহল থেকে রাজনৈতিক মহল। 
  • Link to this news (বর্তমান)