খুলে দেওয়া হল দেশের বৃহত্তম ইমামবাড়া, আগামী দশদিন সাধারণের জন্য প্রবেশ অবাধ
বর্তমান | ১১ জুলাই ২০২৪
সংবাদদাতা, লালবাগ: মহরমের আগেই খুলে দেওয়া হল সাবেক নবাবি স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন নিজামত ইমামবাড়া। হাজারদুয়ারি প্যালেস মিউজিয়ামের ঠিক বিপরীত দিকে অবস্থিত নবাবি স্থাপত্যের নিদর্শনটি ভারতের বৃহত্তম তথা এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ইমামবাড়া। ১৭৪৬ সালে সিরাজদৌল্লা নির্মিত কাঠের ইমামবাড়া সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যায়। ১৮৪৮ সালে বর্তমান ইমামবাড়াটি নির্মাণ করেছিলেন নবাব মনসুর আলি খান ওরফে ফেরাদুন জাঁ। সারা বছর বন্ধ থাকলে মহরমের আগে দশ দিনের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এই দশদিন সর্বসাধারণের অবাধ প্রবেশাধিকার থাকে। নবাবি আমলের রীতি মেনে চলতি বছরে ৭ জুলাই, রবিবার ইমামবাড়ার দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৬ জুলাই পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য খোলা থাকবে। ১৭ জুলাই ধর্মীয় অনুষ্ঠান শেষে বন্ধ হয়ে যাবে ইমামবাড়া। নবাবি স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন নিজামত ইমামবাড়ার দেখভাল ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে মুর্শিদাবাদ এস্টেট। মুর্শিদাবাদ এস্টেটের ম্যানেজার দেবব্রত রায় বলেন, চলতি বছর ৭ জুলাই থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য ইমামবাড়া খোলা থাকবে। কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে নবাবি আমলের ৩৯টি আলম, ১১টি হায়দার আলম, তাজিয়া এবং নবাবদের ব্যবহৃত নানা মূল্যবান জিনিসপত্র দর্শনার্থীদের জন্য প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইমামবাড়ার ভিতরের মদিনায় সযত্নে রাখা রয়েছে চার শতাধিক বছরের কোরাণ। ফলে দর্শনার্থীরা সারা বছর যে জিনিসগুলি দেখার সুযোগ পান না এই সময়ে তার সুযোগ হয়। মহরমের দিন চারেক আগে ইমামবাড়ার সামনের মাঠে মেলা বসে। মেলায় প্রচুর মানুষের সমাগম হয়। নবাব বংশের সদস্য সৈয়দ রেজা আলি মির্জা ( ছোটে নবাব) বলেন, ইমামবাড়া সারা বছরে মহরমের সময় মাত্র দশদিন খোলা থাকে। কাজেই মুর্শিদাবাদ ঘুরতে আসা দেশ-বিদেশের পর্যটকদের ইমামবাড়া নিয়ে একটা কৌতূহল থাকে। সেই কারণে এই সময়ে ইমামবাড়ার ভিতরে ঘুরে দেখার জন্য বেশ কিছু পর্যটক আসেন। তাছাড়া জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষজন তো আসেনই। ইমামবাড়া সূত্রে জানা গিয়েছে, এই দশদিন সকাল ও সন্ধ্যায় ইমামবাড়ার ভিতরে মজলিস বা ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়। ইমাম সহ ধর্ম বিষয়ে জ্ঞানী ব্যক্তিরা ধর্ম নিয়ে আলোচনা করেন। শুধু মুসলমান ধর্মের মানুষ নয়, অন্যান্য ধর্মের বহু মানুষ মজলিসে যোগদান করেন। ১৬ জুলাই সারারাত ধরে ধর্মীয় আলোচনা চলবে। ১৭ জুলাই সকালে ইমামবাড়া থেকে শোক মিছিল বের হয়ে নতুনগ্রামের কারবালায় যাবে। ওইখানে শোক জ্ঞাপন সহ ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালিত হবে। মহরম উপলক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাশাপাশি বাংলাদেশ, ইরান প্রভৃতি দেশ থেকেও মানুষজন আসেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেন, মহরম উপলক্ষ্যে ইমামবাড়ায় প্রচুর মানুষের ভিড় হয়। ফলে বাজার কিছুটা চাঙ্গা হয়। সেজে উঠেছে ইমামবাড়া।-নিজস্ব চিত্র