সোমেন পাল, গঙ্গারামপুর: টিফিনের ঘণ্টা পরতেই প্রতিদিনের মতো বুধবারও বন্ধুদের সঙ্গে মিড ডে মিলের লাইনে দাঁড়িয়েছিল ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র অভিজিৎ সরকার। হঠাৎই সে হুমড়ি খেয়ে পড়ে সামনের দিকে। অভিজিতের ওই অবস্থা দেখে শোরগোল পড়ে যায়। উঁচু ক্লাসের দাদারা তড়িঘড়ি তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে প্রধান শিক্ষকের ঘরের সামনে। চোখে-মুখে জল দিয়ে তাকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করে একাদশ-দ্বাদশের ছাত্ররা। অভিযোগ, ছাত্রটির সঙ্কটজনক অবস্থাতেও বিশেষ গুরুত্ব দেননি কুশমণ্ডির কচড়া হাইস্কুলের শিক্ষকরা। অত্যন্ত দায়সারাভাবে তাঁরা অসুস্থ ওই ছাত্রের পরিবারকে খবর দিতে বলেন। পরিবারের লোকজনের স্কুলে আসতে বেশ কিছুটা সময় চলে যায়। অবশেষে তাঁরা এসে নিয়ে যায় প্রায় ৬ কিমি দূরে ইটাহার হাসপাতালে। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। চিকিৎসকরা অভিজিৎকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপরই ক্ষোভে ফেটে পড়ে মৃত ছাত্রের পরিবার ও এলাকার লোকজন। অসুস্থ হয়ে পড়ার পরই কেন শিক্ষকরা ওই ছাত্রকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন না, এই প্রশ্ন তুলে স্কুলে ভাঙচুর শুরু করেন উন্মত্ত জনতা। রীতিমতো রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় স্কুল চত্বর। গ্রামবাসীর হামলা থেকে বাঁচতে ঘরের দরজা আটকে দেন প্রধান শিক্ষক রানা বসাক। কিন্তু তাতেও রক্ষা মেলেনি। অভিযোগ, ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা দরজা ভেঙে শিক্ষকদের উপর হামলা চালান। ক্ষোভের রোষ বাড়তে থাকায় একসময় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় স্কুলে। ঘটনার খবর পেয়েই স্কুলে চলে আসে পুলিস। তাদের সামনেই স্কুলে তাণ্ডব চালাতে থাকেন স্থানীয়রা। উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিস লাঠিচার্জ করে বলে অভিযোগ। গঙ্গারামপুর মহকুমা পুলিস আধিকারিক দীপাঞ্জন ভট্টাচার্য অবশ্য জানিয়েছেন, কচড়া হাইস্কুলের পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
এদিকে, ঘটনায় গাফিলতির কথা মানতে নারাজ স্কুলের প্রধান শিক্ষক রানা বসাক। তাঁর দাবি, ষষ্ঠ শ্রেণির ওই পড়ুয়া অসুস্থ হয়ে পড়ার পরই আমরা তার প্রাথমিক চিকিৎসা করি। কিন্তু পরে হাসপাতালে ওই পড়ুয়ার মৃত্যু হতেই স্কুলে হামলা চালায় উত্তেজিত জনতা। তারা পুলিসের সামনেই আমাকে ও আমার সহকর্মীদের মারধর করেছে। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে শিক্ষকদের বাইক। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে লাইব্রেরিতে। ভেঙে ফেলা হয়েছে স্কুলের জানালা, দরজা। স্কুলের তরফে থানায় অভিযোগ জানানো হবে। মৃত ছাত্রের বাবা খুশি সরকার তাঁর ছেলের মৃত্যুর জন্য স্কুলের শিক্ষকদের দিকেই আঙুল তুলেছেন। তাঁর তোপ, ‘ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়ার পরই শিক্ষকরা যদি নিজেরাই তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যেতেন, তাহলে হয়তো ছেলেকে বাঁচানো যেত। শিক্ষকদের এই গাফিলতির জেরেই ছেলেকে হারালাম।’ লণ্ডভণ্ড লাইব্রেরি। - নিজস্ব চিত্র