নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা, বারাসত, রানাঘাট ও রায়গঞ্জ: হিংসার ছোটখাট কয়েকটি ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবেই মিটল রাজ্যের চারটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপ নির্বাচন। কলকাতার মানিকতলা, উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা, নদীয়ার রানাঘাট (দক্ষিণ) ও উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ মিলিয়ে চারটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপ নির্বাচনে বুধবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৬২.৭১ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে রায়গঞ্জে। ৬৭.১২ শতাংশ। তালিকায় একেবারে পিছনে মানিকতলা। এই কেন্দ্রে ভোটদানের হার ৫১.৩৯ শতাংশ। রানাঘাট (দক্ষিণ) ও বাগদা কেন্দ্রে ভোট পড়েছে যথাক্রমে ৬৫.৩৭ এবং ৬৫.১৫ শতাংশ। রাজ্যের মন্ত্রী সাধন পান্ডের প্রয়াণে শূন্য হয়েছিল মানিকতলা আসন। সাধনবাবুর ‘গড়’ বলে পরিচিত মানিকতলায় তাঁর স্ত্রী সুপ্তি পান্ডেকে প্রার্থী করেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুপ্রিম কোর্টের সবুজ সঙ্কেতের পর এদিন সেখানে নির্বাচন পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। রানাঘাট (দক্ষিণ), বাগদা ও রায়গঞ্জ, এই তিনটি কেন্দ্রের বিধায়করা লোকসভা ভোটে লড়ার জন্য পদত্যাগ করেছিলেন। তাই সেখানেও উপ নির্বাচন অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল।
এদিন নির্বাচন শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল রানাঘাট। দিনভর তা অব্যাহত ছিল। এই পর্বে কোথাও বিজেপি বুথ এজেন্টের বাড়ি লক্ষ্য করে চলেছে গুলি, আবার কোথাও ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ক্যাম্প অফিস। হিংসার জড়িত থাকার অভিযোগে রানাঘাটে ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নির্বাচন পর্বে বাগদায় বিজেপি প্রার্থীকে শুনতে হয়েছে ‘গো-ব্যাক’ স্লোগান, ভাঙচুরও হয়েছে তাঁর গাড়ি। এই ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিনজনকে। উপ নির্বাচনে ভোট কম পড়ার একটা প্রবণতা বরাবরই রয়েছে কলকাতায়। মানিকতলা তার ব্যতিক্রম হয়ে উঠতে পারেনি। কাজের দিন হওয়ায় চাকরিজীবী মানুষের একটা বড় অংশ বুথমুখো হননি। তবে এই কেন্দ্রে ব্যাপক রিগিং ও ছাপ্পার অভিযোগ এনেছেন বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবে। একইসঙ্গে জানিয়েছেন, কাঁকুড়গাছি-ফুলবাগান এলাকার ৮৯টি বুথে পুনর্নির্বাচনের দাবিতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছেন। প্রসঙ্গত, ২০২১’এর বিধানসভা নির্বাচনে ২০ হাজারের কিছু বেশি ভোটে পরাজিত হয়ে সেবারও বিজেপি প্রার্থী কল্যাণবাবু আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কল্যাণবাবুর সুরেই রানাঘাট (দক্ষিণ) ও বাগদা কেন্দ্রে পদ্মপার্টির প্রার্থীরা নির্বাচনের নামে ‘প্রহসন’ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। যদিও তৃণমূলের বক্তব্য, গত লোকসভা নির্বাচনে গোটা দেশের সঙ্গে বাংলাতেও প্রত্যাখাত হয়েছে বিজেপি। সেই ধারা অব্যাহত। তাই পরাজয়ের ভয়েই আজগুবি অভিযোগ করছে গেরুয়া শিবির।
এদিন নির্বাচন পর্বে সবচেয়ে বড় অভিযোগটি উঠেছে উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসকের বিরুদ্ধে। কমিশন সূত্রের খবর, বেলা ১২টার পরে রায়গঞ্জ পুরসভার ১, ২, ১০, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৮, ২০, ২১ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডের সিসি ক্যামেরা বন্ধ করতে বলেন বলে অভিযোগ ওঠে। ওয়েব কাস্টিংয়ের সময় ঘটনাটি অ্যাডিশনাল সিইও বিজিত ধরের নজরে এলে, তিনি তা সিইওর নজরে আনেন। কমিশন সূত্রের খবর, এরপরই ওই জেলাশাসকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে জেলাশাসককে অপসারণ করা হবে।