• সিবিআই তদন্ত নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মামলা করার অধিকার আছে রাজ্যের
    বর্তমান | ১১ জুলাই ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর পক্ষেই সায় সুপ্রিম কোর্টের। বুধবার দেশের সর্বোচ্চ আদালতে মুখ পুড়ল নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের। রায় গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের অধিকারের পক্ষেই। সিবিআই তদন্তের ক্ষেত্রে ‘জেনারেল কনসেন্ট’ বা সাধারণ সম্মতি প্রত্যাহার করে নিয়েছে রাজ্য। কিন্তু তারপরও একের পর এক মামলায় এই কেন্দ্রীয় এজেন্সির হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। সেই ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এতেই আপত্তি তোলে কেন্দ্র। জানানো হয়, সিবিআই স্বশাসিত সংস্থা। তাই এ ধরনের কোনও মামলার গ্রহণযোগ্যতাই নেই। যদিও এদিন সেই আপত্তি খারিজ করে দিল সর্বোচ্চ আদালত। বিচারপতি বি আর গাভাই এবং বিচারপতি সন্দীপ মেহতার বেঞ্চের রায় সাফ জানাল, ‘দিল্লি স্পেশাল পুলিস এস্টাবলিশমেন্ট আইনের বলে গঠিত সিবিআই। তাই আমাদের মতে, এটি কেন্দ্রেরই তৈরি সংস্থা এবং কেন্দ্রীয় সরকারের তত্ত্বাবধানেই কাজ করে। তাই আলোচ্য ইস্যুতে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মামলা করতেই পারে রাজ্য। রাজ্যের সেই অধিকার আছে।’ তবে মূল বিতর্ক অর্থাৎ রাজ্যের অনুমতি ছাড়া সিবিআই তদন্ত করতে পারে কি না, তার ভবিষ্যৎ পরে ঠিক হবে। আগামী ১৩ আগস্ট থেকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত শুনানি চলবে সুপ্রিম কোর্টে।


    যদিও সুপ্রিম কোর্টের এদিনের রায়ে রাজ্য সরকার তার যুক্তিতে অনেকটা এগিয়ে রইল বলেই আইনজীবী মহলের মত। ২০২১ সাল থেকে চলছে এই মামলা। ২৪ বার শুনানির দিন পিছনোর আবেদন করেছে কেন্দ্র। তারই মধ্যে উভয়পক্ষের সওয়াল-জবাব শেষে গত ৮ মে রায়দান স্থগিত রেখেছিল সুপ্রিম কোর্ট। এদিন ৭৪ পৃষ্ঠার রায়ে রাজ্যের হয়ে কপিল সিবাল, অভিষেক মনু সিংভি, বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য কী সওয়াল করেছেন, পাল্টা কেন্দ্রের হয়ে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা কী বলেছেন, সেকথা উল্লেখ করা হয়েছে। এবং শেষে বলা হয়েছে, কেন্দ্রের আপত্তি গ্রহণযোগ্য নয়। রাজ্য যে মামলা করেছে, তার যুক্তি রয়েছে। শীর্য আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন রাজ্যের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘এটা রাজ্য সরকারের নৈতিক জয়। এটা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ক্ষেত্রে এক ঐতিহাসিক রায়। এই মামলাটিও দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ও বৃহত্তর ও স্বার্থের জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ।’


    ২০১৮ সালের ১৬ নভেম্বর সিবিআই তদন্তের প্রশ্নে ‘জেনারেল কনসেন্ট’ প্রত্যাহারের প্রস্তাব পাশ হয় রাজ্য বিধানসভায়। ঠিক হয়, রাজ্যে কোনও মামলায় এফআইআর করে তদন্ত করতে হলে সিবিআইকে অবশ্যই রাজ্য সরকারের অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় এজেন্সি তা মানছে না বলে অভিযোগ। গোটা বিষয়টিতে কেন্দ্রের দিকেই আঙুল তোলে মমতা সরকার।  কেন্দ্রের পক্ষে তুষার মেহতার অবশ্য দাবি করেন, সিবিআই স্বাধীন সংস্থা। ‘দিল্লি স্পেশাল পুলিস এস্টাবলিশমেন্ট অ্যাক্ট ১৯৪৬’ বলে তৈরি ‘বিধিবদ্ধ’ সংস্থা। কেন্দ্রীয় সরকার তদন্তকে প্রভাবিত করে না। তাই এই মামলার কোনও যুক্তিই নেই। যদিও রাজ্যের পাল্টা প্রশ্ন ছিল, সংসদে যখন সিবিআই সম্পর্কে প্রশ্ন আসে, তখন কে উত্তর দেয়? কর্মিবর্গ মন্ত্রক, যার মাথায় রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাই আইনবলে বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান হলেও সিবিআই আদতে কেন্দ্রের তদন্তকারী সংস্থা। রাজ্যের সেই যুক্তিকেই প্রাথমিকভাবে মান্যতা দিল সুপ্রিম কোর্ট। 
  • Link to this news (বর্তমান)