নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: আড়িয়াদহ এলাকায় সাম্রাজ্য কায়েম করার ‘ছাড়পত্র’ পেয়েই বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল জয়ন্ত সিং। কামারহাটির এক বাহুবলীর সামান্য ‘টেনিয়া’ থেকে এলাকার নতুন ‘বস’ হয়ে উঠেছিল। ‘জয়ন্ত’ থেকে ‘জায়ান্ট’ হয়ে ওঠার এই পর্বে চূড়ান্ত অবিশ্বাস থেকেই নিজের প্রাসাদোসম নতুন বাড়ি ও পুরাতন বাড়ি যাওয়ার গলি-রাস্তা সিসি ক্যামেরা দিয়ে মুড়ে দিয়েছিল। এমনকী পারিবারিক খাটালেও বসেছিল সিসি ক্যামেরা। কিন্তু মা ও ছেলেকে মারধরের কাণ্ডে গ্রেপ্তার হতেই জয়ন্তের একদা মিত্ররাই এখন খুলে দিচ্ছে, জায়ান্টের অত্যাচারের প্যান্ডোরা বক্স। সমাজ মাধ্যমে তা শেয়ারও হচ্ছে।
বুধবার পুলিস কমিশনার অলোক রাজোরিয়া সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, অত্যাচারের ভিডিওতে থাকা আট অভিযুক্তকে ইতিমধ্যেই শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত ছ’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জয়ন্ত সিং, সৈকত মান্না ওরফে জঙ্ঘা ও সুদীপ সাহা ওরফে গুড্ডুকে আগেই গ্রেপ্তার হয়ে জেল হেফাজতে ছিল। মঙ্গলবার নতুন করে অভিষেক বর্মণ ওরফে ছোটু, সুভাষ বেরা ও সুমন দে’কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ছ’জনের বিরুদ্ধেই একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। এদিন আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের ছ’দিনের পুলিস হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
আড়িয়াদহের প্রতাপাদিত্য রোডের মৌসুমি মোড় লাগোয়া এলাকা জয়ন্ত সিংয়ের আদি বাড়ি। মূল রাস্তা থেকে অলিগলির ভিতর দিয়ে সেই বাড়িতে পৌঁছলে, অতীতে পরিবারের হতশ্রী আর্থিক দশার হদিশ মিলবে। খাটালের মধ্যে কয়েক কামরার বাড়িতে জয়ন্তের বেড়ে ওঠা। খাটালে এখনও রয়েছে ২০টির মতো মোষ। কিন্তু মূল রাস্তা থেকে খাটাল পর্যন্ত কয়েকশো মিটার গলিতে সিসি ক্যামেরার নজরদারি। খাটালের ভিতরেও ক্যামেরা। বাড়িতে থাকা জয়ন্তের পরিবারের লোকেদের ডাকাডাকি করলেও কেউ সাড়া দেয়নি। আশপাশের বাড়ির সদস্যরা টুঁ শব্দ করতে চায়নি। ইশারায় স্থানীয় এক ব্যক্তি দেখিয়ে দিয়েছেন ‘জায়ান্টের’ নয়া প্রাসাদোসম বাড়ি। পেল্লাই সাইজের সাদা ধপধপে তিনতলা ভবন। পুকুরের দিকের অংশ কাঁচ দিয়ে ঘেরা। স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, বাড়ির ভিতরে ঢুকলে বুঝবেন, ফাইভ স্টার কেতা কাকে বলে! কয়েক কোটি খরচ হয়েছে। ওই জমি বেওয়ারিশ। আগে বাচ্চারা খেলত। পার্ক করার কথা ছিল। প্রভাব খাটিয়ে দখল করে ওই জমিতে বাড়ি। পুকুরের একাংশও বুজিয়েছে।
কেমন ছিল ‘জায়ান্টের’ অত্যাচার? আড়িয়াদহ এলাকার প্রোমোটার অরিত্র ঘোষ ওরফে বুম্বা ছিল জয়ন্তের গ্যাংয়ের এক সময়ের সদস্য। কিন্তু ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে ঝামেলার জেরে ২০২৩ সালের ২৯ জুন তাঁর উপর হামলা চালায় জয়ন্ত। বাড়ির সামনে তাঁকে বেধড়ক মারধর করার পর বোমা ও গুলি ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। ওই ঘটনায় জয়ন্ত গ্রেপ্তার হয়েছিল। কিন্তু জেল থেকে বেরিয়ে রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে আরও বেড়ে যায় দাপট। ‘জয়ন্ত’ তখন পুরোপুটি ‘জায়ান্ট’ হয়ে উঠেছিল।