নিজস্ব প্রতিনিধি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা:ক্রমশ এগিয়ে আসছে সমুদ্র! এক-একটা পূর্ণিমা বা অমাবস্যার কোটালে উত্তাল ঢেউয়ের ধাক্কায় পাড় ভাঙছে একটু একটু করে। গত তিন-চার বছরে সাগরদ্বীপে সমুদ্র কপিলমুনির মন্দিরের দিকে প্রায় ২০০-২৫০ মিটার এগিয়ে এসেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।এই অবস্থায় আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, গঙ্গাসাগরে কপিলমুনির বর্তমান মন্দিরও কি তাহলে সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া স্রেফ সময়ের অপেক্ষা? ইতিহাস বলছে, এর আগে অন্তত ছ’বার সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে কপিলমুনির মন্দির। বর্তমান মন্দিরটি সাত নম্বর। এই অঞ্চলে যেভাবে সমুদ্রের পাড় ভাঙছে, তাতে বিষয়টি নিয়ে এখনই প্রশাসনের তৎপরতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বাসিন্দারা।
এই আশঙ্কা আরও তীব্র হয়েছে গত অমাবস্যার কোটালের পর থেকে। সমুদ্রপাড়ের ক্ষয় রোধ করতে মন্দিরের সামনে পাড় উঁচু করে বাঁধ দিয়েছিল সেচদপ্তর। গত কোটালে ঢেউয়ের ধাক্কায় সেই বাঁধের কার্যত দফারফা হয়ে গিয়েছে। সাগরের ২ ও ৩ নম্বর বিচ বেহাল হয়ে রয়েছে আগে থেকেই। তার উপর যেভাবে বাঁধ চৌচির হয়ে গিয়েছে, তাতে বিচের বাকি অংশ সহ মন্দির নিয়ে আশঙ্কা বাড়ছে। চলতি বর্যাকালের মাঝামাঝি সময় এই অবস্থা হলে শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়াবে, ভেবে পাচ্ছেন না উদ্বিগ্ন বাসিন্দারা। নথি অনুযায়ী, বর্তমান মন্দিরটি ১৯৭৪ সালে তৈরি হয়েছিল। কথিত আছে, ৪৩০ খ্রিষ্টাব্দে রানি সত্যভামা সাগরদ্বীপে প্রথম কপিলমুনির মন্দির তৈরি করেছিলেন। আগে মন্দিরটি বাঁশের এবং ছাউনি অ্যসবেসটসের ছিল। বিধানচন্দ্র রায় মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন মন্দির নির্মাণে ১১ হাজার টাকা দিয়েছিলেন বলে জানা যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, কোনওরকমে একটা বাঁধ দিয়ে দিলে বা চটজলদি কোনও ব্যবস্থা করলে আর হয়তো মন্দির বাঁচানো যাবে না। এর জন্য প্রয়োজন রীতিমতো মাস্টারপ্ল্যান করে বড় প্রকল্প গ্রহণ। এ বিষয়ে সেচদপ্তরের আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, মেগা প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বুঝলেও গোটা বিষয়টি তাদের হাতে নেই। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের ছাড়পত্র প্রয়োজন। তা মিলছে না বলে কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে বলে দাবি তাঁদের। সাগরদ্বীপের এই পরিস্থিতি নিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। সেচদপ্তরের সঙ্গে ইতিমধ্যে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। শীঘ্রই পরিস্থিতি সরেজমিতে খতিয়ে দেখতে প্রতিনিধি দল যাবে ওখানে। পরবর্তী পদক্ষেপ সবার সঙ্গে আলোচনা করেই ঠিক করা হবে।’-নিজস্ব চিত্র