নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত ও সংবাদদাতা, বনগাঁ: ঘড়িতে তখন সকাল ন’টা। বাগদার হেলেঞ্চা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের আদর্শ ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের বাইরে শুনশান পরিস্থিতি। ভিতরে ঢুকতেই দেখা গেল এক জওয়ানকে। বুথকেন্দ্রের সামনে আরও দু’জন দাঁড়িয়ে। রাজ্য পুলিসের কর্মীও আছেন। বুথের বাইরে একজন ভোটারকেও দেখা গেল না। বুথের ভিতরে খোশমেজাজে এজেন্ট ও ভোটকর্মীরা। ফাঁকা বুথ দেখে এক জওয়ান হাসি মুখে বলে ফেললেন, ‘ভোটাররা কোথায়?’ তিনিই জানালেন, সকাল থেকে একজন-দু’জন করে ভোটার আসছেন। লাইনই নেই। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। নেতাদের সুবিধা পাইয়ে দিতে কেন বারবার ভোট নিয়ে মাতামাতি করব?
একমাস আগে লোকসভা নির্বাচন শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে ভোটের উৎসাহে ভাটা পড়ে গিয়েছে। তারই প্রমাণ পাওয়া গেল বুধবার বাগদা কেন্দ্রের উপ নির্বাচনে। সকাল থেকে ভোটারদের সেভাবে বুথমুখী হতে দেখা যায়নি। দুপুর পর্যন্ত প্রায় সব বুথই ছিল কার্যত ফাঁকা। এদিন ভোটের হার ছিল অনেকটাই কম।
হেলেঞ্চা থেকে সিন্দ্রানি, কোনিয়াড়া ১, ২ সহ প্রায় প্রতিটি পঞ্চায়েত এলাকাতেই মোট ৩০১টি বুথে ভোটারদের লম্বা লাইন চোখে পড়েনি। লোকসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রে বনগাঁ লোকসভা, সর্বোপরি বাগদা বিধানসভা কেন্দ্রে সকাল থেকেই ভোটারদের লম্বা লাইন চোখে পড়েছিল। মহিলাদের উপস্থিতি ছিল নজরকাড়া। কিন্তু উপ নির্বাচনে ভোটারদের চূড়ান্ত অনীহা দেখা গিয়েছে।
কুমড়োখোলা এলাকায় বাড়ির তৈরির কাজ করছিলেন দীপেন বিশ্বাস। তাঁর কাছে জানতে যাওয়া হয়েছিল, কখন ভোট দিতে যাবেন? উত্তরে একরাশ অনীহা ঝরে পড়ল। বললেন, ‘বিকেলের দিকে কাজ সেরে যাব। তবে ঠিক নেই। কারণ কিছুদিন আগেই ভোট দিয়েছি। ফের লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেওয়া মানে একটা রোজ নষ্ট হওয়া।’ অন্যদিকে, বাড়ির সামনে উঠানে রান্না করছিলেন রীতা দাস। তিনি বলেন, ‘আর ভোট দিতে যাব না। উপ নির্বাচন রাজ্যের ভোট। আর আমার একটা ভোটে তো বিরাট কিছু পরিবর্তন হবে না। তাই এবার ভোট দেওয়ার ইচ্ছা নেই। দেখি প্রতিবেশীরা যদি যায়, তাহলে খাওয়া-দাওয়া করে যেতে পারি।’ ভোটারদের অনীহা সত্ত্বেও প্রতিটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রেই ছিল কড়া নিরাপত্তা। প্রতিটি বুথেই ওয়েবকাস্টিংয়ের ব্যবস্থা করেছিল নির্বাচন কমিশন। এককথায় গণতন্ত্রের উৎসবে শামিল হতে সেই অর্থে দেখা গেল না বাগদাবাসীকে।-নিজস্ব চিত্র