• বৃদ্ধাশ্রমের ভোল বদলে বিলাসবহুল রিসর্ট! সরকারি জায়গায় কীভাবে চলছে এসব?
    ২৪ ঘন্টা | ১১ জুলাই ২০২৪
  • প্রসেনজিৎ মালাকার: মুখ্যমন্ত্রী যখন সরকারি জমি উদ্ধারের প্রচেষ্টা করছে সেখানে সরকারি জমিতে বৃদ্ধাশ্রম থেকে জলের মূল্যে লিজ নিয়ে গড়ে উঠল বিলাসবহুল রিসোর্ট। প্রশ্নের মুখে বীরভূম জেলা পরিষদ। যদিও, খতিয়ে দেখে বুলডজার চালানোর আশ্বাস দিয়েছে বর্তমান জেলা সভাধিপতি। জেলাশাসকের জমিতে বৃদ্ধাশ্রম তৈরি করে বীরভূম জেলা পরিষদ। পরিচালনার দায়িত্ব পায় এক সংস্থা। কিন্তু কয়েকবছরের মধ্যে সেই বৃদ্ধাশ্রম ভোল বদলে হয়ে পরিণত হয়েছে বিশাল এক রিসর্টে। আমোদপ্রমোদের জায়গা হয়ে উঠেছে জেলা পরিষদের তৈরি সেই রুমগুলি।

    শান্তিনিকেতনের বল্লভপুরের বেনেপুকুর ডাঙ্গাতে অবস্থিত একটি নামী রিসর্ট তৈরির ইতিহাস ঘাটলে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসছে। বৃদ্ধাশ্রম থেকে রিসর্ট তৈরিতে অনুমোদন দেওয়া আদৌ আইনসিদ্ধ তো, প্রশ্ন অনেকেরই। মুখ্যমন্ত্রী যেখানে সরকারি জমি দখলমুক্ত করার কথা বলছেন সেখানে শান্তিনিকেতনের মতো জায়গায় সরকারি জায়গার উপর এমন রিসর্ট চলছে কীভাবে? আইনের ‘ফাঁকফোঁকর’ বুঝে লিজ নিয়ে রিসর্ট চালানোর এই খবরে সরকারের যে মুখ পুড়তে চলেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

    প্রশাসন সূত্রে খবর, বোলপুর-শ্রীনিকেতন পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে অবস্থিত বল্লভপুর মৌজার জেএল ৬৩ নম্বর দাগে ওই রিসর্টটি অবস্থিত। কিন্তু আসলে ওই জায়গাটি জেলা কালেক্টর অর্থাৎ জেলাশাসকের অধীনস্ত। সেখানে বীরভূম জেলা পরিষদ সিদ্ধান্ত নেয় বিল্ডিং বানানোর। ৮টি রুম বিশিষ্ট একটি বৃদ্ধাশ্রম বানানো হয়। যেখানে ৬০ বছরে উর্দ্ধে মানুষজন থাকবেন বলে ঠিক হয়। এরপর ২০১৭ সালে জেলা পরিষদের স্থায়ী সমিতির বৈঠকে নানুরের বাসাপাড়ার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে জেলা পরিষদ ১ বছরের জন্য লিজ দেয়। সেইসময় স্থায়ী কমিটিতে সিদ্ধান্ত হয়, ওই সংস্থার কোনও অধিকার নেই ওই জমির উপর।

    এমনকী জেলা পরিষদের তৈরি ওই বিল্ডিংয়ের উপর। যদিও ওই সংস্থা ২০১৯ সালে বৃদ্ধাশ্রমটি চালাতে চায় না বলে ছেড়ে দেয়। ঠিক সে সময় স্থানীয় আরেকটি সংস্থা ১ লক্ষ ৫২ হাজার টাকায় বার্ষিক ভাড়া ও এককালীন ৮ লক্ষ টাকা দেওয়ার শর্তে সর্ব্বোচ্চ ৩৩ বছরের জন্য লিজ নেয়। ইতিমধ্যেই যেখানে শান্তিনিকেতনে সোনাঝুরি এলাকায় জমির মূল্য প্রায় কোটি টাকার কাছাকাছি, সেখানে এত কম টাকায় লিজেই বা পেল কি করে সংস্থা? সেটা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন? কিন্তু বৃদ্ধাশ্রম চালানোর জন্য না অন্য মতলবে তা এখন দিনের মতো পরিষ্কার।

    হঠাৎ করেই ওই সংস্থাটির আবেদনের ভিত্তিতে ২০২২ সালে বৃদ্ধাশ্রমটির উপর বিল্ডিং তৈরি, রেস্টুরেন্ট বাড়ানোর জন্য অনুমতি দিয়ে দেয় তৎকালীন জেলা পরিষদ বোর্ড। এখন সেই বৃদ্ধাশ্রমে না আছে কোনও বৃদ্ধ মানুষ, না আছে প্রশাসনের নজরদারি। তার বদলে রমরমিয়ে চলছে সুইমিং পুল যুক্ত বিশাল এক রিসর্ট। এতদিন এই সত্য চাপা ছিল। এ বছর জেলা পরিষদ স্থায়ী সমিতির বৈঠকে এই নিয়ে আলোচনা হয়। তাই এই বছর আর কোনও লিজ ভাড়া নেওয়া হয়নি ওই সংস্থা থেকে। প্রশ্ন উঠছে, সরকারি এত দামী সম্পত্তি কীভাবে বিলাসবহুল রিসর্ট হয়ে যেতে পারে? আর সেক্ষেত্রে পূর্ববর্তী জেলা পরিষদ বোর্ডের ভূমিকা ঠিক কেমন ছিল সেই প্রশ্নও উঠছে।

    এই নিয়ে আগের বোর্ডের দিকে সম্পূর্ণ দোষ ঠেলতে শুরু করেছেন বর্তমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ। তিনি বলেন, আমাদের নজরে আসতেই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছি। সরকারি জায়গাতে বৃদ্ধাশ্রম মানা যায় কিন্তু অন্য কেউ রিসর্ট বানিয়ে ব্যবসা করবে এটা মানব না। মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন যদি এর মধ্যে জল মেশানো থাকে যদি তাহলে ব্যবস্থা নিতে। এ বছর কোনও ভাড়াও নেওয়া হয়নি। খুব শ্রীঘ্রই পরবর্তী পদক্ষেপ নেব। এই নিয়ে ওই সংস্থার সভাপতি রবীন্দ্রনাথ রায়ের মতামত জানতে ফোন করা হলে তিনি হুমকি দেন। ছবি তুলতে গেলে দেখে নেওয়ার পর্যন্ত হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখেন। কিন্তু প্রশাসনের গোচরেই যদি এসব জমি দখল করে ব্যবসা চলে তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবেন, প্রশ্ন উঠছেই।

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)