অরিজিৎ গুপ্ত, হাওড়া: পরনে সাদামাটা শাড়ি। হাতে পলা। মাথায় সিঁদুর। যেন একেবারে গৃহবধূ। অথচ সেই মহিলাই নাকি হাওড়ার ডোমজুড়ে সোনার দোকানে ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। বিহার থেকে ‘চাচি’কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধৃত ‘চাচি’ ওরফে আশা দেবীকে বৃহস্পতিবার বিহার থেকে বাংলায় আনা হয়। হাওড়া জেলা হাসপাতালে শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর আদালতে তোলা হয়েছে তাকে। নিজেদের হেফাজতে নিয়ে ‘চাচি’কে জেরা করতে চান তদন্তকারীরা।
গত ১১ জুন ডোমজুড়ের একটি সোনার গয়নার দোকানে ৬ দুষ্কৃতী ঢুকে দোকানের মালিক ও কর্মচারীদের হাত-পা সেলোটেপ দিয়ে বেঁধে ফেলে। বন্দুকের বাঁট দিয়ে তাঁদের মাথায় মেরে প্রায় আধঘন্টা ধরে অপারেশন চলে। দোকানের যাবতীয় সোনার গয়না লুট করে তারা। বেলা ১২ টা নাগাদ ঘটা এই ঘটনার পুরো ভিডিও ধরা পড়ে সিসিটিভি ফুটেজে। তদন্তে নামেন হাওড়া সিটি পুলিশের গোয়েন্দারা। তদন্তে নেমেই তাঁরা বুঝতে পারেন ভিনরাজ্যের কেউ এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। গোয়েন্দাদের কয়েকটি দল ভিনরাজ্যে যায়। আর সেই তদন্তে নেমে অবশেষে এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বিহার থেকে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ধৃতরা হল চাচি ওরফে আশা দেবী (৪৯), রবীন্দ্র সাহানি (৪৬), বিকাশ কুমার ঝা (৩০), অলোক কুমার পাঠক (৩৩) এবং মণীশ কুমার মাহাতো (২৪)।
তদন্তে নেমে বিস্ফোরক তথ্য পান তদন্তকারীরা। ধৃত ‘চাচি’ বিহারের সমস্তিপুরের বাসিন্দা। আগে কুখ্যাত দুষ্কৃতী সুবোধ সিংয়ের গ্যাংয়ে ছিল ‘চাচি’। আসানসোলের হীরাপুরে একটি ভাড়াবাড়িতে বসে ডোমজুড়ের সোনার দোকানে ডাকাতির ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করে সে। এর পর ট্রেনে করে আসানসোল থেকে সোজা হাওড়া চলে আসে। সেখান থেকে সড়কপথে পৌঁছয় হাওড়ার অঙ্কুরহাটি। গত মে মাসজুড়ে ঘর ভাড়া নিয়ে অঙ্কুরহাটিতে ছিল ‘চাচি’। ডাকাতির আগে গোটা এলাকায় মাসভর থেকে রেইকি করে। তার পরই ডাকাতির ছক কষে ‘চাচি’।
ডাকাতরা কোন পথে আসবে, লুটপাটের পর কোন পথে ফিরবে, কোথায় থাকবে, লুটের জিনিসপত্র কোথায় বিক্রি করা হবে তার সমস্ত বন্দোবস্ত করে সে। এমনকী ডাকাতি করতে আসার ক্ষেত্রে বাইক এবং গাড়ির ব্যবস্থাও করে দেয় ‘চাচি’। পুলিশের দাবি, মোটা টাকার বিনিময়ে ডাকাতদলকে লজিস্টিক সাপোর্ট দিত ‘চাচি’। তাকে বৃহস্পতিবার ট্রানজিট রিমান্ডে বিহার থেকে হাওড়ায় আনা হয়। তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই ডাকাতির ঘটনায় আরও নানা তথ্য সামনে আসবে বলেই আশা তদন্তকারীদের।