লকডাউনের সময় কর্মহারা হয়েছিলেন বহু মানুষ। সেই সময় রোজগারের বিকল্প পথ খুঁজেছিলেন অনেকেই। আর সেই সময় থেকেই ছবি আঁকাকেই আয়ের পথ হিসেবে বেছে নেন উত্তরপাড়ার বাসিন্দা সুমন মোদক।তাঁর বাবা গৌতম মোদকের একটি মুদি দোকান রয়েছে। উত্তরপাড়া জয় কৃষ্ণ লাইব্রেরির ঠিক বিপরীতে তাঁদের দোকান। সেখানে মুদিখানার সামগ্রীর সঙ্গে বিক্রি হয় সুমনের হাতে আঁকা পোর্ট্রেট। দোকানের দায়িত্ব সামলে শিল্পীসত্ত্বাকেও হারিয়ে যেতে দেয়নি এই বছর ২৫-এর তরুণ। মুদির দোকানে বসেই পেন্সিল চালান সুমন। বৃদ্ধ বাবার দোকান সামলানোর সঙ্গে নিজের স্বপ্ন পূরণের প্রস্তুতি, তিনি দুই কাজই করে চলেছেন।
সুপারস্টার থেকে ক্রিকেট জগতের তারকা কিংবা বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী, সুমনের পোর্ট্রেটে প্রত্যেকের চেহারাই ফুটে ওঠে নিখুঁতভাবে। ছোট থেকেই আঁকার প্রতি বিশেষ আগ্রহ ছিল তাঁর। মধ্যবিত্ত বাবা -মা ছবি আঁকার প্রতি ছেলের ঝোঁক দেখে আশঙ্কা করেছিলেন হয়তো পড়াশোনার ক্ষতি হবে। কিন্তু, ছেলের জেদের কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েছিলেন তাঁরা। সুমনের লক্ষ্য ছিল একটি আঁকার স্কুল খোলার। লকডাউনের সময় তাঁর পরিবারে থাবা বসায় আর্থিক অনটন। সেই সময় পরিবারের পাশে দাঁড়াতে আঁকা শেখানো শুরু করেন এই যুবক। এখন তিনি ৫০ জন শিক্ষকের 'স্যার'।
সুমন জানান, গ্রাজুয়েশনের পর তিনি চাকরির বিস্তর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, কোনও সুফল পাননি তিনি। তাই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন ছবি আঁকাকেই। প্রথমে নিজেদের দোকানের বাইরে কয়েকটি ছবি রাখা শুরু করেছিলেন সুমন। তাতেই মুগ্ধ হয়েছিলেন অনেকেই। এরপর তিনি ছবি রাখার সঙ্গে সঙ্গেই তা বিক্রি হয়ে যেতে শুরু করে। ৫০০ থেকে শুরু করে ১০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয় তাঁর আঁকা ছবি।
বিয়ে বাড়ি হোক বা কাউকে উপহার দেওয়ার উপলক্ষ্য, তাঁর কাছে আসে ছবি আঁকার অনুরোধ। পাশাপাশি বহু শিশুকে বিনা পয়সাতেও আঁকা শেখান সুমন। তাঁর বাবা গৌতম মোদক বলেন, 'পরিবারের ব্যবসা সামলানোর দায়িত্ব আপাতত ছেলের। তবে ছেলের ছবি আঁকার প্রতি নেশার ক্ষেত্রে পরবর্তীকালে তাঁরা অন্তরায় হতে চান না। এখন সুমন দোকানে বসেই ছবি আঁকে এবং তা মোটা টাকায় বিক্রি হয়। বাইরের রাজ্য থেকেও ডাক পাচ্ছেন তিনি। সংসারের দায়িত্ব সামলে সুমনের লক্ষ্য পেন্সিল, রং, তুলি দিয়ে নিজের শিল্পীসত্ত্বাকে আরও আঁকড়ে ধরা।