চতুর্থ শ্রেণির দুই ছাত্রীকে যৌন নিগ্রহে ধৃত শিক্ষক
বর্তমান | ১২ জুলাই ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, আরামবাগ: পুরশুড়ায় চতুর্থ শ্রেণির দুই ছাত্রীকে যৌন নিগ্ৰহের অভিযোগে স্কুলেরই এক পার্শ্বশিক্ষককে পকসো মামলায় গ্ৰেপ্তার করেছে পুলিস। ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পুরশুড়ার ধনপোতা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘটনাটি ঘটে। ছাত্রীদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে প্রধান শিক্ষক গত জুনমাসে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন। পুলিস বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর শুরু করে। বুধবার রাতে অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্ৰেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার তাঁকে আরামবাগ মহকুমা আদালতে তোলা হয়।
পুরশুড়া ব্লকের চিলাডাঙি পঞ্চায়েত এলাকায় ধনপোতা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৮৬ জন পডুয়া পড়াশোনা করে। অধিকাংশ পড়ুয়ার বাবা-মা চাষবাস ও দিনমজুরের কাজ করেন। ওই শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। ছ’মাস আগে এই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হয়ে আসেন অচিন্ত্যকুমার মালিক। অচিরেই খুদে পড়ুয়াদের তিনি মন জয় করে নেন। চতুর্থ শ্রেণির দুই ছাত্রী সাহস পেয়ে গত জুন মাসে প্রধান শিক্ষককে নির্যাতনের কথা জানায়। এমনকী অন্য শ্রেণির পড়ুয়ারাও জানায় নানা অছিলায় ওই শিক্ষক তাদের শরীরে হাত দিত। দীর্ঘদিন ধরে এই অত্যাচার চললেও ভয়ে তারা কিছু বলতে পারেনি। প্রধান শিক্ষক বিষয়টি জানার পরই থানায় অভিযোগ জানান।
অচিন্ত্যবাবু বলেন, গত জুন মাসে স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির দুই ছাত্রী আমাকে জানায় ওই শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে শ্রেণিকক্ষের ভিতরে নানাভাবে যৌন নির্যাতন করছে। ভয়ে তারা কিছু বলতে পারেনি। খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারলাম শুধু ছাত্রী নয় ছাত্রদের শরীরেও নানাভাবে হাত দিতেন ওই শিক্ষক। বিষয়টি প্রথমে অভিভাবকদের ডেকে জানাই। ওই শিক্ষককে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। উনি অপরাধ স্বীকার করে নেন। তারপরই পুরশুড়া থানায় লিখিত অভিযোগ করি। শিক্ষাদপ্তরের আধিকারিকদের বিষয়টি জানিয়েছি। দুই ছাত্রীর সঙ্গে অন্য পড়ুয়ারা একধরনের ট্রমার মধ্যে আছে। গত দু’বছর ধরে এই বাচ্চাগুলো শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে আশঙ্কা করছি। এই ঘটনায় আমরা বিস্মিত। এক অভিভাবক বলেন, প্রধান শিক্ষক বিষয়টি আমাদের জানান। তাঁকে থানায় জানানোর জন্য বলি। এই ঘটনার পর মেয়েকে স্কুলে পাঠাতে ভরসা পাচ্ছি না।
পুরশুড়া থানার এক অফিসার বলেন, গত ২৫ জুন অভিযোগ হয়েছিল। স্পর্শকাতর বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর করা হয়। শিক্ষক, অভিভাবক, পড়ুয়াদের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বুধবার রাতে অভিযুক্ত শিক্ষককে পকসো মামলায় গ্ৰেপ্তার করা হয়েছে।
পুরশুড়া দক্ষিণ চক্রের এসআই অর্ণব সিংহরায় বলেন, প্রধান শিক্ষক মৌখিকভাবে বিষয়টি জানিয়েছেন। লিখিত কাগজপত্র পেলে জেলা শিক্ষা দপ্তরে পাঠানো হবে। আমরাও বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নেব। আরামবাগ গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষকা রাজশ্রী দে বলেন, বাচ্চা মেয়েরা ভয়ে কিছু বলতে পারবে না ভেবেই অনেক সময় ওদের টার্গেট করা হয়। তবে এই ধরনের অভিযোগ শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওঠা উদ্বেগজনক।
পুরশুড়ার ভাঙামোড়া নতুনগ্রাম কেএনসিএম ইন্সটিটিউশনের প্রধান শিক্ষক বলেন, পুলিস নির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়েই নিশ্চিত গ্ৰেপ্তার করেছে। তবে ছাত্রছাত্রীদের ব্যবহার করে শিক্ষকদের ফাঁসানোর উদ্দেশ্যেও এধরনের কিছু অভিযোগ তোলা হয়। আশা করছি অভিযোগের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে। দোষ প্রমাণিত হলে কঠোর শাস্তি হওয়া দরকার।