নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: ব্রাউন সুগার পাচার চক্রের দু’জনকে গ্রেপ্তার করে পাচারের রুট সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চাইছেন গোয়েন্দারা। তাদের কাছে প্রায় ২০ লক্ষ টাকার ব্রাউন সুগার ছিল বলে জানা গিয়েছে। উত্তর ভারত থেকে আনা এই ব্রাউন সুগার পৌঁছন হয় মুর্শিদাবাদের লালগোলায়। বিভিন্ন রুট ধরে আগে আসানসোল-দুর্গাপুরে আসে সেইসব মাদক। তারপর কেরিয়াররা তা সরকারি বাসে মুর্শিদাবাদে পৌঁছে দেয়। সিউড়ি বাসস্ট্যান্ড থেকে ধূত দুই কেরিয়ারকে জেরা করে গোটা দলের নাগাল পেতে চাইছে এসটিএফ।
বুধবার সন্ধ্যায় সিউড়ি বাসস্ট্যান্ডে আসানসোল-মালদা সরকারি বাসে বিপুল পরিমাণ মাদক আটক করে এসটিএফ। রাজস্থানের আজমের থেকে ওইসব মাদক মুর্শিদাবাদের লালগোলার দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। পিঠ ব্যাগের ভেতরে কাপড়ে মুড়ে হান্নান আলি ও শেখ শামিম নামে দুই দুষ্কৃতী তা নিয়ে আসছিল। সাদা পোশাকের পুলিস তাদের ব্রাউন সুগার সমেত তাদের ধরে ফেলে। এরপর জেরা করে পুরো রুটটা জানতে পারেন তদন্তকারীরা। শুধু রাজস্থান বলে নয়, উত্তর ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে এইসব মাদক আসে। যেখানে সরকারি উপায়ে পোস্ত চাষ হয়, সেখান থেকে ঘুরপথে কারবারিদের মাধ্যমে মাদক আনা হয়। কেরিয়াররা উত্তর ভারত যাওয়ার সময় গাড়ি বদলাতে বদলাতে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শ্রমিক হিসেবে তারা ওই রাজ্যে যায়। আর ফেরার সময় বিভিন্ন রুট ধরে বাসে, ট্রেনে করে আসানসোল, দুর্গাপুরে আসে। কখনও আবার কারবারিদের সূত্র ধরে মাঝপথে চারচাকা গাড়িও মিলে যায়। কোনওভাবে মুর্শিদাবাদে মাদক পৌঁছে দিতে পারলেই মোটা কমিশন। আসানসোল থেকে মুর্শিদাবাদ যাওয়ার জন্য মূলত সিউড়ি হয় ফরাক্কাগামী বাসেই তারা যাতায়াত করে। সাধারণ যাত্রীদের মতোই ব্যাগের মধ্যে মাদক নিয়ে চলে যায়। সিউড়ি বাসস্ট্যান্ড ‘মিড পয়েন্ট’। অনেক সময়ে অসুবিধা বুঝলে সিউড়ি থেকেই রুট বদলে অন্য ভাবে পাশের জেলায় যাওয়ার ছক কষে। গোয়েন্দাদের অনুমান, এর পিছনে মুর্শিদাবাদের লালগোলার কয়েকজন মাথা রয়েছে। বিভিন্ন ভাবে বাজারজাত করার জন্য সেখানে মাদক প্রস্তুত করা হয়। সেখান থেকেই কারবারের সিংগভাগ নিয়ন্ত্রণ হয়। আর কেরিয়ার হিসেবে এমন কাউকে বেছে নেওয়া হয়, যারা নিজেরাও নেশাগ্রস্ত।
ধৃত ওই দু’জনকে বৃহস্পতিবার সিউড়ির বিশেষ আদালতে তোলা হয়। সরকারি আইনজীবী তপন গোস্বামী বলেন, দু’টি ধারাতে পুলিস মামলা রুজু করেছে। একটি সূত্র বলছে, বাজেয়াপ্ত মাদকের বাজারমূল্য প্রায় কোটি টাকা। পুলিস ওই দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজনে ১০ দিনের হেজাজতে চেয়েছিল। বিচারক ৮ দিনের হেফাজত মঞ্জুর করেছেন। এসটিএফ টিমের এক আধিকারিক বলেন, উত্তর ভারত থেকেই সাধারণত মাদক আসে। বিশ্বস্ত সূত্র কাজে লাগিয়ে অপারেশনটা চালানো হয়েছিল। স্থানীয় এলাকাতে এদের এজেন্ট থাকে। যারা কিছু গড়বড় বুঝলেই প্ল্যান বদলাতে নির্দেশ দিয়ে দেয়। এবারও তেমন পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু সফল হয়নি। তবে আরও দু’টি মাদক ভর্তি ব্যাগ ছিল বলেও খবর এসেছিল। তা কতখানি সত্যি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নিজেদের হেফাজতে পেলে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুরো চক্রটার নাগালে পাওয়ার চেষ্টা চালাব।