নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: বুধবার রাতে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ধানতলায় ৬৮ নম্বর ব্যাটেলিয়নের এক মহিলা কনস্টেবলের রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয়েছে। রাত ৯টা নাগাদ ক্যাম্পের ভিতরেই নিজের সার্ভিস রাইফেল থেকে গুলি করে তিনি আত্মঘাতী হন বলে বিএসএফ সূত্রে দাবি। মৃত কনস্টেবলের নাম অনামিকা কুমারী (২৫)। তাঁর বাড়ি বিহারের ছাপরা জেলায়। দেহটি রানাঘাট পুলিস মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে ধানতলা থানার পুলিস। ক্যাম্পের ভিতরে অন্যান্য জওয়ান ও আধিকারিকদের উপস্থিতি সত্ত্বেও কীভাবে সার্ভিস রাইফেল থেকে গুলি চলল, তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।
বিএসএফের ৬৮ নম্বরে ব্যাটেলিয়নের ইছামতি বর্ডার আউটপোস্টে কর্মরত ছিলেন ওই মহিলা কনস্টেবল। গতবছরের নভেম্বর মাসে বাহিনীতে চাকরি পেয়েছিলেন অনামিকা। ধানতলার সীমান্ত এলাকাতেই তাঁর প্রথম পোস্টিং হয়। বুধবার রাত আনুমানিক ৯টা নাগাদ ক্যাম্পের ভিতরে থাকা মহিলা কনস্টেবলদের থাকার ঘর থেকে আচমকাই গুলি চলার শব্দ পান সহকর্মীরা। ছুটে এসে দেখেন মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন অনামিকা। পাশেই পড়েছিল নিজের সার্ভিস রাইফেলটি। এরপর তাঁকে তড়িঘড়ি দত্তপুলিয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে চিকিৎসক মৃত বলে জানিয়ে দেন। ধানতলা থানার পুলিস জানিয়েছে, মৃতদেহ ময়নাতদন্তের পরেই মৃত মহিলা কনস্টেবলের দেহ তাঁর পরিবার ও বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হবে। তিনি আদৌ আত্মঘাতী হয়েছেন কি না, সেই বিষয়টিও তদন্ত করে দেখা হবে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে আসার পরেই মৃত্যুর বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
বুধবার রাতে মহিলা কনস্টেবলের বাড়িতে তাঁর মৃত্যুর খবর পৌঁছতেই কান্নার রোল ওঠে ছাপড়া গ্রামে। এদিন ভোরে বিমানে দমদম বিমানবন্দরে নামেন মৃত জওয়ানের বাবা অভদীশ কুমার দুবে ও ভাই রীতেশ। সেখান থেকে তাঁরা আসেন রানাঘাটে। বিকেল ৪টে নাগাদ পুলিস মর্গের বাইরে চুপচাপ দাঁড়িয়েছিলেন মৃতার অসহায় বাবা। পরনের জামায় লেগে মাটি। দৌঁড়তে গিয়ে কখন বা পায়ের হাওয়াই চটিটাও ছিঁড়ে গিয়েছে। চোখ-মুখ বিধ্বস্ত। বাড়ির ফোন আসতেই ডুকরে কেঁদে উঠছেন। ফোন রাখার পর মেয়ের কথা জিজ্ঞাসা করলে বলেন, আমি পুজোপাঠ করি। চাষবাস করেই সংসার চলে। ছেলেটা এখনও কলেজে পড়ছে। এখানে প্রথম পোস্টিং হওয়ার পর গত ফেব্রুয়ারি মাসে ছুটিতে বাড়িতে গিয়েছিল মেয়ে। বুধবার সকালেও আমার সঙ্গে কথা হল। এরপর রাত ১০টায় ক্যাম্প থেকে ফোন এল। বলল মেয়ে নাকি আত্মঘাতী হয়েছে। একনাগাড়ে কথাগুলো বলেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন।
মৃতার ভাই রীতেশ কুমারের কাছে জানা গেল, অভাবের পরিবারে খুব কষ্টে পড়াশোনা করে চাকরি পেয়েছিলেন অনামিকা। মৃত্যুর দিন বিকেলেও ফোনে কথা হয়েছিল ভাইয়ের সঙ্গে। ছুটি পাওয়া যায় না বলে খানিকটা মনমরাও ছিলেন তিনি। কিন্তু চাকরি পাওয়ার মাত্র সাত মাসের মধ্যেই যে এমন মর্মান্তিক পরিণতি হবে, স্বপ্নেও ভাবেনি পরিবার। এদিন ময়নাতদন্তের পর মৃত মহিলা কনস্টেবলের দেহ পুলিস মর্গের বাইরে আনতে সন্ধ্যা প্রায় ৭টা বেজে যায়। তাঁকে ফুলের স্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানান অন্যান্য জওয়ানরা। ততক্ষণে অঝোরে নেমেছে বৃষ্টি। জাতীয় পতাকায় মোড়ানো কফিনবন্দি দেহ রওনা দেয় বিহারের গ্রামের উদ্দেশে।