• স্বনির্ভর গোষ্ঠী থেকে মহিলা শিল্পপতি তৈরিতে উদ্যোগ
    বর্তমান | ১২ জুলাই ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: স্বনির্ভর গোষ্ঠী থেকে বাছাই করে মহিলা উদ্যোগপতি তৈরি করবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এতদিন  কোনও স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে ব্যবসা করার জন্য ঋণ দেওয়া হতো। এবার গোষ্ঠীর কর্মঠ ও নিজে কিছু করার স্বপ্ন দেখা মহিলাদের সেই ঋণ দেওয়া হবে। যাঁরা অন্তত ব্যবসায়িকস্তরে নিজেকে কিছুটা দাঁড় করাতে পেরেছে তাঁরা ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। আর যাঁদের ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে, তাঁদের ঋণ পাওয়ার ব্যাপারে কোনোও বাধা থাকবে না। ঋণের পরিমাণ, ৭৫ হাজার টাকা থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। রাজ্যের লক্ষ্য একটাই, মহিলা উদ্যোগপতি তৈরি করে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা বাড়ানো। জানা গিয়েছে, নদীয়া জেলায় ৮ হাজার ১১১ জন  মহিলা উদ্যোগপতি বানানোর টার্গেট নিয়েছে প্রশাসন। আপাতত তাঁদের সকলকে গড়ে ১ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে‌‌। সেইমতো জেলার বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠী থেকে মহিলা উদ্যোগপতি বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। 


    জেলাশাসক অরুণ প্রসাদ বলেন, ‘মহিলাদের স্বাবলম্বী করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। যাতে গ্রামীণ এলাকার আর্থিক ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়। মহিলাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তাঁদের উদ্যোগপতি বানানো হবে। আমরা সেইমতো কাজ করছি।’ 


    আগে গ্রামীণ এলাকার নির্দিষ্ট স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে আর্থিক সাহায্য করা হতো। ব্যাঙ্কের মাধ্যমে লোন দেওয়া হতো‌। সেই টাকা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফিরিয়ে দিতে হতো গোষ্ঠীগুলিকে। কখনও আবার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা সংঘের থেকেও টাকা লোন নেন। নির্দিষ্ট রেজ্যুলেশন করে সেই টাকা দেওয়া হতো। অর্থাৎ পুরো প্রক্রিয়াটাই চলত গোষ্ঠীগতভাবে। এবার তাতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে সরকারের তরফে। যেখানে শুধুমাত্র গ্রুপ নয় গ্রুপের মধ্যে থাকা মহিলাকেও আলাদাভাবে লোন দিয়ে ব্যবসার জন্য উৎসাহিত করা হবে। 


    প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, মহিলাদের মধ্যে থেকে ছোট ছোট উদ্যোগপতি তৈরি করা হচ্ছে। গোষ্ঠীর একজন মহিলা সদস্য ৭৫ হাজার থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ব্যাঙ্কের লোন পেতে পারেন যদি তাঁর নিজস্ব ব্যবসা থাকে। কিন্তু শর্ত হল, সেই মহিলার নিজের নামে ট্রেড লাইসেন্স ও ব্যবসার কাগজপত্র থাকতে হবে। এর ফলে গ্রামীন এলাকায় অর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হবে। কারণ গ্রামবাংলায় এই ধরনের মহিলা উদ্যোগপতি থাকলেও তার সংখ্যা খুব কম। সচারাচর মহিলার স্বামীর নামই ট্রেড লাইসেন্স থাকে। স্বামীরাই মাঝারি কিংবা বড় ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকেন। অথচ, স্বামীর পক্ষে ব্যাঙ্ক থেকে ব্যবসার জন্য লোন পাওয়া বেশ কঠিন। কিন্তু এই নতুন ব্যবস্থার ফলে ট্রেড লাইসেন্স থাকা মহিলার পক্ষে লোন পাওয়া অনেক সহজ। 


    ইতিমধ্যেই জেলার স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি থেকে উদ্যোগপতি মহিলাদের বাছাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। প্রতি গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত থাকা ১০-১৫ জন করে মহিলাকে নেওয়া হয়েছে। যাদের নাম দেওয়া হয়েছে ‘বিত্তসখী’। তাদের পাঁচ দফায় ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। এই ‘বিত্তসখী’দের কাজ হল বিভিন্ন ব্লকে গোষ্ঠীর মধ্যে থাকা উদ্যোগপতিদের খুঁজে বের করা। এই ‘বিত্তসখী’দের উদ্যোগপতি মহিলাদের ট্রেড লাইসেন্স করানো, ব্যবসায় উৎসাহিত করা থেকে রেজিস্ট্রেশনের মতো কাজ করাবে। 
  • Link to this news (বর্তমান)