রাজদীপ গোস্বামী, ঝাড়গ্রাম: শহরজুড়ে করা হবে বৃক্ষরোপণ। এমনকী বৃক্ষরোপণের পর সেই গাছের দত্তক নিতে পারবেন প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ। এমনই অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন ঝাড়গ্রামের কুমুদ কুমারী ইন্সটিটিউশনের ২০০০ সালের মাধ্যমিক ব্যাচের ছাত্ররা। তাঁদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন শহরবাসী। তাঁদের উদ্যোগেই শহরে এক হাজারের বেশি বৃক্ষরোপণ করা হবে। সারা বছর ধরেই পালন করা হবে এই কর্মসূচি। শহরের সাধারণ মানুষও এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবেন।
জানা গিয়েছে, জঙ্গলমহলের মানুষের কাছে প্রাণের চেয়েও প্রিয় গাছ। তবে নগরায়নের চাপে শহরের বুকে একের পর এক বহুতল গড়ে উঠছে। তাই আগের তুলনায় বনাঞ্চলের পরিমাণও কমেছে। এর ফলে আগামী দিনে শহরে দূষণের মাত্রা বাড়তে পারে। তাই ২০০০ সালের মাধ্যমিক ব্যাচের ছাত্ররা পরিবেশ রক্ষায় একজোট হয়েছেন। কেকেআই ওয়াই টু কে (এমপি) নামে এক গ্রুপের মাধ্যমে প্রাক্তন ছাত্ররা একত্রিত হয়েছেন। সেই গ্রুপে বর্তমানে ১০২জন প্রাক্তন ছাত্র রয়েছে। গ্রুপের সম্পাদক সন্দীপকুমার ঘোষ বলেন, পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব সকলের। তাই আমরা একত্রে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করছি। সারা বছর ধরেই এই ধরনের কর্মসূচি পালন করা হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝাড়গ্রামের প্রাচীন স্কুলগুলির মধ্যে অন্যতম কুমুদ কুমারী ইন্সটিটিউশন। একশো বছরে পা দেওয়া এই স্কুলের ছাত্ররা ঝাড়গ্রামের নাম বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছেন। পিছিয়ে নেই ২০০০ সালের মাধ্যমিক ব্যাচ। তাঁরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি বেশ কয়েকবছর আগে থেকে মানুষের সেবায় নিয়োজিত হয়েছেন।
কেকেআই ওয়াই টু কে গ্রুপের সভাপতি অর্ক প্রধান ও সহ সম্পাদক তাপস রাউত বলেন, আমাদের মূলমন্ত্র হল একতা। সকলে মিলে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষার জন্য নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। পুলিস ও প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করছে। জানা গিয়েছে, করোনা পরিস্থিতির সময় এই ব্যাচের ছাত্ররা একত্রিত হন। নিজেদের প্রাণের মায়া ত্যাগ করে করোনাকালে মানুষের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করেন। সেই সময় এই ছাত্রদের উদ্যোগে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিয়েছেন স্কুলের প্রাক্তনীরা। তাঁদের উদ্যোগেই রক্তদান শিবির, বস্ত্র বিতরণ শিবিরের আয়োজন করা হয়। এবার বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি শুরু হল।
স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, এই গ্রুপের ছাত্রদের তরফে আগামী ১৪ জুলাই অরণ্য সপ্তাহ উদযাপন করা হবে। আর্বান নেস্টের পক্ষ থেকে ৫২টি গাছ শহরের বিভিন্ন প্রান্তে রোপণ করা হবে। প্রতিটি গাছের উচ্চতা গড়ে ১৪ ফিট। কৃষ্ণচূড়া, জারুল, অশোক, ইত্যাদি গাছ রোপণ করবেন সাধারণ মানুষ। এছাড়া গাছগুলি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেবেন দত্তক নেওয়া মানুষ। অর্থাৎ প্রতিটি গাছ একজন করে অভিভাবক পাবেন। এই অভিনব উদ্যোগে খুশি সাধারণ মানুষ।
কেকেআই ওয়াই টু কে গ্রুপের কনভেনার অর্ণব মাজি, পল্লব বটব্যাল বলেন, আমাদের পাশে সমাজসেবী জয়দীপ ঘোষ, চিকিৎসক প্রণব মজুমদার, চিকিৎসক সঞ্জয় নন্দী সবসময় থেকেছেন। মানুষের জন্য এই কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। ধাপে ধাপে ১৫০টি গাছ রোপণ করা হবে।