• ফুঁসছে মহানন্দা, ফুলহর, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বৈঠক
    বর্তমান | ১২ জুলাই ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, মালদহ: গঙ্গা, ফুলহর, মহানন্দা সহ মালদহের সব নদীর জল দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টির কারণে নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। জেলার তিনটি প্রধান নদীর জলস্তর ক্রমশ বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে জেলার বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রশাসনের তরফে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ডাকা হয়। জেলা কালেক্টরেটের কনফারেন্স হলে আয়োজিত এদিনের বৈঠকে মালদহ জেলা পরিষদের সভাধিপতি লিপিকা বর্মন ঘোষ, জেলাশাসক নীতিন সিঙ্ঘানিয়া সহ অন্যান্য আধিকারিক ও জনপ্রতিনিধিরা অংশ নেন।


    জেলাশাসক বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এদিন বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বৈঠক ডাকা হয়। এদিনের বৈঠকে সেচ সহ অন্যান্য সরকারি দপ্তরের আধিকারিক, এনডিআরএফের প্রতিনিধি, বিডিও, ব্লকস্তরের বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর ও পুলিস আধিকারিকরা যোগ দিয়েছিলেন। আধিকারিকদের একাংশ সরাসরি বৈঠকে যোগ দেন। কেউ কেউ ভার্চুয়াল পদ্ধতিতেও বৈঠকে অংশ নেন। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার, তা আধিকারিকদের নিতে বলা হয়েছে। বামনগোলায় নদী বাঁধ ভেঙে বিপত্তি হয়েছে। বামনগোলা ব্লকের বিভিন্ন এলাকা জল মগ্ন হয়ে রয়েছে। ফসল নষ্ট হয়েছে। সেখানকার বিডিওকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিন সেখানে মহকুমা শাসককে পরিদর্শনে পাঠানো হয়েছে। রতুয়া, হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকায় বহু বাড়ি নদীগর্ভে চলে গিয়েছে। আরও কিছু বাড়ি, স্কুল ফুলহর নদীর গ্রাসে বিলীন হওয়ার পথে। সেই পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে প্রশাসন। প্রয়োজনে প্রশাসনের তরফে নৌকা নামিয়ে দুর্গতদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে। ফসল ও সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে প্রশাসন দাঁড়াবে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গঙ্গা, ফুলহর এবং মহানন্দা নদীর জলস্তরের বিপদসীমা যথাক্রমে ২৪.৬৯, ২৭.৪৩ এবং ২১ মিটার। এদিন মানিকচক ঘাটে গঙ্গা ২৩.৪৮ মিটার উচ্চতায় বয়েছে। তেলজনা ঘাটে ফুলহর বয়েছে ২৬.১৯ মিটার উচ্চতায়। অন্যদিকে, ইংলিশবাজারে মহানন্দার জলস্তর ছিল ১৯.৩৬ মিটার। ফলে তিনটি নদীর জলই বিপদসীমার খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। বিপদসীমা থেকে মাত্রা আধ থেকে এক মিটার জলস্তর বাড়লেই তা অতি বিপদসীমা ছাড়িয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়া বা তা উপচে আশপাশের এলাকায় জল ঢুকতে শুরু করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিম্নচাপ অক্ষরেখার কারণে যেভাবে সংশ্লিষ্ট তিন নদীর উচ্চ অববাহিকা অঞ্চলে গত কয়েকদিন ধরে লাগাতার ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হচ্ছে, তাতে জলস্তর এক-দু’মিটার বৃদ্ধি যে কোনও সময় হতে পারে বলে আধিকারিকরা আশঙ্কা করছেন। উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে নীচে রয়েছে মালদহ জেলা। ফলে বাকি জেলার বৃষ্টির জল নদী বহন করে নিয়ে এসে মালদহকে প্লাবিত করে। এবারও সেই পরিস্থিতি তৈরি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মানিকচকের বাসিন্দা প্রভাস মণ্ডল, রতুয়ার শেখ সাদেক বলেন, আমরা গঙ্গা, ফুলহরের তীরে বাস করি। গত দু’দিন ধরে নদী কার্যত ফুঁসতে শুরু করেছে। যে কোনও সময় বসতবাড়ি, চাষের খেত গিলে খেতে পারে। আমরা আতঙ্কে রাতে দু’চোখের পাতা এক করতে পারছি না। প্রশাসন ত্রাণ ও উদ্ধারকাজের জন্য প্রস্তুত থাকলে ভালো হয়।  নিজস্ব চিত্র     
  • Link to this news (বর্তমান)