সৌম্যজিৎ সাহা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: শহরের সুবিধা এবার মিলবে গ্রামেও। এতদিন কেবল রাজ্যের পুরসভাগুলিতে অনলাইনে সম্পত্তিকর জমা দেওয়ার সুযোগ ছিল। সেই পরিষেবা শীঘ্রই চালু হতে চলেছে রাজ্যের সমস্ত পঞ্চায়েতে। শুধু তাই নয়, এক দফার বদলে বছরের সম্পত্তিকর মেটানো যাবে তিনটি কিস্তিতে। এর ফলে করদাতাদের একসঙ্গে বড় অঙ্কের টাকার ধাক্কা সামলাতে হবে না। পাশাপাশি, এই খাতে সরকারের আয়ও বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা। ইউপিআই বেসড পেমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে বাসিন্দারা পঞ্চায়েত কার্যালয়ে সাঁটানো কিউআর কোড স্ক্যান করে কর জমা দিতে পারবেন। রাজ্যের প্রায় সাত কোটি মানুষ এর ফলে উপকৃত হবেন বলে মনে করছেন প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা।
একাধিক পঞ্চায়েত প্রধানের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, তাঁরা ইতিমধ্যে এই ব্যবস্থা চালুর জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। এখন এ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য ‘আপলোড’ করার কাজ চলছে। করের বিষয়টি উল্লেখ করে একটি ফর্ম পূরণ করতে হয়েছে প্রধানদের। নতুন ব্যবস্থায় একজন করদাতা এক বছরে তিন দফায় করের টাকা জমা করতে পারবেন। এতদিন করদাতাদের বছরের কর এক লপ্তেই জমা করতে হতো। এই নিয়মের গেরোয় পড়ে আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষজন অনেক সময় কর মেটাতে পারতেন না। কারণ, তাঁদের কাছে সেই টাকা জোগাড়ও একটা বড় ধাক্কা। কিন্তু বছরে তিনবার কর মেটানোর সুযোগ থাকলে এত বকেয়া থাকবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
রাজ্যের পঞ্চায়েত এলাকায় ট্রেড লাইসেন্স, বিল্ডিং প্ল্যান সহ বিভিন্ন কাজ এখন অনলাইনে হয়। একমাত্র সম্পত্তিকর দেওয়ার বিষয়টি অফলাইনে চলছিল। এবার তাও অনলাইনে হতে চলেছে। যে সংস্থার মাধ্যমে টাকা জমা পড়বে, তাদের সঙ্গে দ্রুত ‘মউ’ স্বাক্ষর হবে বলে খবর। সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই পঞ্চায়েত এলাকায় মিলবে এই আধুনিক পরিষেবা। পঞ্চায়েত কার্যালয়ে সাঁটানো কিউআর কোডের পাশাপাশি কর সংগ্রহকারীরাও এই কোড নিয়েই বাড়ি বাড়ি যাবেন। স্ক্যান করলে নাগরিকের অ্যাকাউন্ট থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা চলে যাবে পঞ্চায়েতের কোষাগারে। এই নিয়ম পুরোদমে চালু হয়ে গেলে পঞ্চায়েত দপ্তর কেন্দ্রীয়ভাবে কর সংগ্রহের উপর নজরদারি চালাতে পারবে। পঞ্চায়েত প্রধানরা বলছেন, যাঁদের করের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি, তাঁরা এই পরিষেবায় প্রভুত সুবিধা পাবেন। আর যাঁরা একেবারেই কর দিতে চান না, তাঁদেরও মনে হবে, এই ব্যবস্থা লাভজনক। কারণ, একবারে অনেক টাকার বদলে সামান্য কিছু টাকাতেই অন্তত একটি কিস্তির কর মেটানোর সুযোগ মিলবে। এ সংক্রান্ত ভূরি ভূরি অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এবার সেসবও থামবে বলে আশা দপ্তরের কর্তাদের।
হাবড়া ব্লকের ভুরকুণ্ডা ২ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রাজশ্রী সাহা বলেন, ‘ধাপে ধাপে ট্যাক্স নেওয়ার জন্য সরকারের যে নির্দেশিকা এসেছে, তার ফলে বহু মানুষ উপকৃত হবেন। রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগ যথেষ্ট ইতিবাচক। বাড়িতে বসেই কর মিটিয়ে দেওয়ার সুযোগ অনেকেই গ্রহণ করবেন।’ বারাসত ২ নং ব্লকের দাদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান আব্দুল হাই বলেন, ‘মানুষকে আর দীর্ঘক্ষণ পঞ্চায়েতে এসে অপেক্ষা করতে হবে না। ধাপে ধাপে টাকা দেওয়ার বিষয়টিও তাদের সাহায্য করবে।’