পঞ্চায়েতে আধাসেনার খরচ না দিয়েই হিসেব চাইছে কেন্দ্র!
বর্তমান | ১২ জুলাই ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: সদ্য মিটেছে লোকসভা ভোট। কিন্তু ২০২৩ সালের জুলাই মাসে হয়ে যাওয়া পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন বাবদ বিপুল খরচের টাকা এখনও মেটায়নি অমিত শাহের দপ্তর। শুধু তাই নয়। অবাক করা বিষয় হল, প্রাপ্য টাকা না ছেড়েই এবার রাজ্যের কাছে খরচের হিসেব চেয়ে পাঠাল কেন্দ্রের এনডিএ সরকার। এ নিয়ে শোরগোল পরে গিয়েছে নবান্নের অন্দরে। রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের বক্তব্য, কেন্দ্র টাকা না দেওয়ায় এই বাবদ বকেয়াই মেটানো যায়নি। ফলে নেই কোনও পেমেন্ট ভাউচার। তাই খুব স্বাভাবিকভাবে অডিটও সম্ভব নয়। আর টাকা না দিয়ে এখন এই সমস্ত তথ্যই রাজ্যের থেকে তলব করছে নয়াদিল্লি। অভিজ্ঞ প্রশাসনিক কর্তাদের মতে, এটা আর কিছুই নয়, টাকা না দেওয়ার নয়া ফিকির।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যে পাঠানো হয়েছিল ৮২২ কোম্পানি আধাসেনা। সেই বাবদ খরচ হয়েছিল ১৩৫ কোটি টাকা। সাধারণত পঞ্চায়েত নির্বাচনের যাবতীয় খরচের দায়িত্ব রাজ্যের। কিন্তু ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিপুল সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে রাজ্য প্রশ্ন তোলায় কলকাতা হাইকোর্ট কেন্দ্রের কাছে জানতে চেয়েছিল, তারা অতিরিক্ত আধাসেনার খরচ বহনে রাজি কি না। তাতে সম্মতিসূচক জবাব দিয়েছিল কেন্দ্র। সেই অনুযায়ী পঞ্চায়েত নির্বাচনের কিছুদিন পরই কেন্দ্রীয় বাহিনী সংক্রান্ত খরচের হিসেব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে পাঠিয়ে দেয় রাজ্য। রাজ্যের এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘পঞ্চায়েত ভোটে মোতায়েন হওয়া কেন্দ্রীয় বাহিনী বাবদ খরচের টাকা আদৌ কেন্দ্র দিতে চায় কি না, তা নিয়েই এবার প্রশ্ন উঠছে। না হলে এমন বোকা বোকা চিঠি কেউ দেয়?’
লোকসভা নির্বাচনে এই বাবদ খরচ প্রাথমিকভাবে মিটিয়ে ভোটের পর ওই টাকা কেন্দ্রকে মিটিয়ে দেওয়ার জন্য আবেদন করা হয় (রিইমবার্সমেন্ট)। তবে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ক্ষেত্রে রিইমবার্সমেন্ট নয়, সম্পূর্ণ টাকা কেন্দ্রেরই সরাসরি মেটানোর কথা। কারণ, আর্থিক প্রতিকূলতার কারণে এই টাকা নবান্নের পক্ষে মেটানো একেবারেই সম্ভব নয়। সম্পূর্ণ বিষয়টি নিয়ে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দপ্তরের অন্দরেও জোর চর্চা শুরু হয়েছে। খরচের অডিট এবং ভাউচার চেয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছেও ৯ জুলাই কেন্দ্রের তরফে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে নবান্ন সূত্রে খবর।
এরইমধ্যে এবারের লোকসভা ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন বাবদ খরচ নিয়েও হিসেব-নিকেশ শুরু হয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রে খবর। লজিস্টিক খরচই পৌঁছে গিয়েছে ৮৫০ কোটি টাকায়। এর সঙ্গে যুক্ত হবে পূর্তদপ্তরের মাধ্যমে হওয়া কাজের খরচও। সেটাও প্রায় ২৫০ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। এছাড়াও ভোট গণনার পরও ৪০০ কোম্পানি বাহিনী রেখে দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত ৫২ কোটি খরচ হয়েছে। সমস্ত হিসেব মিটিয়ে কেন্দ্রের কাছে লোকসভা ভোটে নিযুক্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী বাবদ খরচের রিইমবার্সমেন্ট চেয়ে চিঠি দিতে আরও মাস দু’য়েক সময় লাগতে পারে।