অর্পণ সেনগুপ্ত, কলকাতা: তাঁরা হবু শিক্ষক। ক’দিন পরেই বসবেন বিএড পরীক্ষায়। অথচ নিয়মিত ক্লাসে আসার বাধ্যবাধকতা নেই। স্রেফ গুনাগার দিতে হবে ৫০০ টাকা। তাহলে ৫০ শতাংশ হাজিরা থাকলেও মিলবে পরীক্ষায় বসার সুযোগ। থিওরি তো বটেই, প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। তাহলেই সব মাফ। বাবা সাহেব আম্বেদকর এডুকেশন ইউনিভার্সিটির পরীক্ষা বিজ্ঞপ্তিতে এমন ‘ছাড়’ই দেওয়া হয়েছে ছাত্রছাত্রীদের। এটাকে ঘিরে উঠছে নানা প্রশ্ন।
এমনিতেই রাজ্যের বিএড শিক্ষা বিভিন্ন জটিলতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। বেসরকারি বিএড কলেজগুলি পরিকাঠামো এবং শিক্ষকের অভাবের কারণে ছাত্র ভর্তির অনুমতি পেতে হোঁচট খাচ্ছে। শিক্ষক মহলের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় কড়াকড়ি শুরু করার আগে ‘নামমাত্র’ ক্লাস করেই বিএড সার্টিফিকেট নিয়ে বেরিয়েছেন প্রচুর ছাত্রছাত্রী। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থীর অভাবে তাঁদের অনেকেই শিক্ষকতার চাকরিও জুটিয়ে ফেলেছেন।
এবার প্রশ্ন ওঠে, শিক্ষাদানের উৎকর্ষ তাহলে কোথায় নিশ্চিত হচ্ছে? এক প্রবীণ শিক্ষক বলেন, ‘সিলেবাসের চরিত্র এবং শিক্ষাদানের পদ্ধতিও পাল্টেছে। এগুলিই বিএড কোর্সে শিখে আসেন ছাত্রছাত্রীরা। তাই এই কোর্স বেশি গুরুত্বপূর্ণ। একজন পড়াশোনায় তুখোড় হতেই পারেন কিন্তু কীভাবে ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে পড়া বোঝাতে হবে, পড়াশোনায় আগ্রহী করে তুলতে হবে, দুর্বল পড়ুয়াদের সাহায্য করতে হবে, সেটাই শিক্ষাবিজ্ঞান। আর তা পড়ানো হয় বিএডে।’ খুব স্বাভাবিকভাবেই, একজন গণিতে এমএসসি করার পরে বিএড কোর্স করে এসে যত সহজে, কার্যকরীভাবে স্কুলপড়ুয়াদের অঙ্ক বোঝাতে পারবেন, তা স্রেফ এমএসসি করে আসা একজনের পক্ষে কঠিন। এখানেই বিএডের গুরুত্ব। তাই বিএড কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতাও সাধারণ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চেয়ে ঢের বেশি। বিএড কোর্সে ডামি ক্লাস নেওয়া, পড়ুয়াদের মনস্তত্ত্ব বোঝার মাধ্যমে শিক্ষক হওয়ার পথে এগিয়ে চলেন একজন সাধারণ ছাত্র।
২৩-৩০ জুলাই প্রথম সেমেস্টারের পরীক্ষা। এই পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল ডিসেম্বরে। তবে, আদালতের নির্দেশে পরে ভর্তি হওয়া ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস করার সুযোগ দেওয়ার জন্যই বাড়তি সময় দিতে হয়েছে। এনসিটিইর নির্দেশে, মোট অন্তত ১০০ দিন ক্লাস না করলে পরীক্ষায় বসা যায় না। সেজন্যই এই বাড়তি সময়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, থিওরিতে ৮০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশের মধ্যে হাজিরা থাকলে জরিমানার পরিমাণ ৫০০ টাকা। আর প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসের ক্ষেত্রে সেটা ৮০ শতাংশের পরিবর্তে ৯০ শতাংশ থেকে গ্রাহ্য করা হবে। ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সোমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘রাজ্যের বিএড কোর্স তথা কলেজগুলিকে ধাপে ধাপে একটা স্থিতিশীলতার মধ্যে আনছি। হাজিরার বিষয়টি এগজাম কমিটি ঠিক করে। ভবিষ্যতে এটা নিয়েও কড়া অবস্থান নেওয়া হবে।’