নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: শাগরেদদের হাতে ‘অপারেশন’এর নীল নকশা ‘সাজিয়ে’ দিয়ে জয়ন্ত সিং মজে থাকত ‘নৈশ অভিসারে’, ‘নিশিবাসরে’। বিরোধী পক্ষ, শাসক দলের প্রতিবাদী নেতা, প্রোমোটারদের উপর যখন মধ্যরাতের অপারেশন চালাত ‘আর্মড স্কোয়াড’, তখন আড়িয়াদহের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে ‘নারীসঙ্গে’ ব্যস্ত থাকত ‘জায়ান্ট’ নিজে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যেত মহিলাদের মুখ। এহেন একাধিক মহিলাকে নিয়ে প্রাক্তন খাটাল ব্যবসায়ীর ছবি ভাইরাল হয়েছে। শুধু তাই নয়, আড়িয়াদহের হোয়াইট হাউস (তিন তলা সাদা বাড়ি) তৈরি করেছিল স্রেফ গায়ের জোরে। পুরসভার কোনও অনুমতি ছাড়াই তৈরি হয়েছিল ওই বাড়ি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর চারেক আগেও জয়ন্ত কামারহাটির রথতলা এলাকার এক বাহুবলীর টেনিয়া ছিল। ওই সময় সে নিজেই বিভিন্ন অপারেশনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিত। সেটা করতে গিয়ে এক প্রভাবশালী প্রোমোটারের নজরে পড়ে যায় জয়ন্ত সিং। তাকেই দাবার বোড়ে হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয়। এই পর্বে রাজনৈতিক ‘আশ্রয়’ মিলতেই জয়ন্ত পেয়ে যায় আড়িয়াদহ সামলানোর ভার। জোর করে জমি দখল, পুকুর বোজানো, সিন্ডিকেট, প্রোমোটারদের হুমকি দিয়ে তোলাবাজি, জুয়া-সাট্টা কারবারের প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠে তালতলা ক্লাব। জয়ন্ত থেকে ‘জায়ান্ট’ হওয়ার উত্তরণের পথে ইদানিং সে আর কোনও ‘অপারেশনে’ যেত না। হামলার পরিকল্পনা সাজিয়ে অনুগত শাগরেদদের নির্দেশ দিয়ে দিত। এরপর নিজে মেতে উঠত নারীসঙ্গে। সূত্রের খবর, তালতলা ক্লাব লাগোয়া বহুতলের টপ ফ্লোরে একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ছিল। সেই ফ্ল্যাটে একান্ত ঘনিষ্ঠ শাগরেদ ও পছন্দের নারী ছাড়া কারও প্রবেশাধিকার ছিল না। মধ্যরাত পর্যন্ত ফূর্তি শেষে শাগরেদদের কাছ থেকে দিনের হিসেব নিত। পরিকল্পনা মাফিক কাজ হয়েছে, নিশ্চিত হলে তবেই ফিরে যেত নিজের আস্তানায়। তবে জয়ন্ত প্রকাশ্যে সেই অর্থে মদ্যপান না করলেও, দলের ছেলেদের সুরা ও মাংসে ভাসিয়ে রাখত। সঙ্গে ছিল মাসিক মোটা টাকার মাসোহারা। অর্থ ও প্রভাবের লোভে এলাকার আর্থিক ভাবে দুর্বল বাড়ির পাশাপাশি নামকরা বাড়ির ছেলেরাও যোগ দিয়েছিল তার দলে।
টার্গেট করা প্রোমোটারদের বাগে রাখতে কৌশলও নিত জয়ন্ত। দক্ষিণেশ্বরের আবাসনে সুন্দরী মহিলাদের দেখিয়ে ‘হানি ট্র্যাপে’ ফেলা হতো। টোপে পড়লে মহিলা সরবরাহ করার পাশাপাশি ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি ভিডিও করেও রাখা হতো। শুধু প্রোমোটারদেরই নয়, ঘনিষ্ঠ বৃত্তের মহিলার সঙ্গে নিজের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ছবিও তুলে রাখার অভ্যাস ছিল জয়ন্ত সিংয়ের। সে সব জানত কয়েকজন ঘনিষ্ঠ শাগরেদ। জেলে ঠাঁই হওয়ার পর থেকে জয়ন্ত’র সেই শাগরেদরাই এখন ভিডিও ভাইরাল করছে। এই পর্বেই জয়ন্ত’র আগ্রাসন থেকে রেহাই পাননি শাসক দলের লোকজনও। ২০১৭ সালে কামারহাটি পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলার সুবীর বোসের বাড়িতে হামলা চালিয়েছিল তার গ্যাং। সুবীরবাবু বলেন, সবাই সব কিছু জানত। প্রভাবশালীদের প্রশ্রয় না থাকলে এদের এত দাপাদাপি হয়!
অন্যদিকে, জয়ন্তের বাড়ির বিষয়ে কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল সাহা বলেন, ওই বাড়ির বিল্ডিং প্ল্যান ছাড়াই তৈরি হয়েছে। জমির মালিকের খোঁজ পাওয়া যায়নি। বিএলআরও অফিসে চিঠি করে মালিকের নাম জানার চেষ্টা করা হবে।