নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: প্রথমে আসানসোলের হীরাপুর, তারপর হাওড়ার অঙ্গুরহাটি। ডোমজুড়ে ডাকাতির আগে বিহার থেকে দু’দফায় রাজ্যে ঢুকেছিল ডাকাতরা। ঘটনার প্রায় এক মাস অঙ্কুরহাটির কালিতলা এলাকায় একটি ঘর ভাড়া নিয়েছিল ডাকাতদলের সদস্যরা। সেই ‘ভরকেন্দ্র’ থেকেই চলত টার্গেট খোঁজার রেকি। শেষমেষ দোকানে ঢোকার কাঁচের দরজা দেখে চূড়ান্ত করা হয়েছিল ‘টার্গেট’।
গত ১১ জুন ডোমজুড়ে সোনার দোকানে ডাকাতির ঘটনাটি ঘটে। ইতিমধ্যেই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে ফেলেছে হাওড়া পুলিসের গোয়েন্দারা। এমনকী তাদের মধ্যে কয়েকজনকে হাওড়ায় নিয়েও আসা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিহার থেকে গ্রেপ্তার করে আনা ডাকাতদলের দুই সদস্য আশা দেবী ওরফে ‘চাচি’ এবং অলোক পাঠককে হাওড়া জেলা আদালতে পেশ করে পুলিস। দু’জনকে ১৪ দিনের পুলিস হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক। এই ডাকাতির ঘটনায় যুক্ত মণীশ মাহাত নামে অপর একজন বিহারের জেলে বন্দি। তাকে ‘শোন অ্যারেস্ট’ দেখানো হয়েছে। এবার ট্রানজিট রিমান্ডে আনার চেষ্টা চালাচ্ছেন পুলিসকর্তারা। বৃহস্পতিবার হাওড়ার নগরপাল প্রবীণকুমার ত্রিপাঠী বলেন, গোটা ডাকাতিতে ‘চাচি’র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তার আত্মীয়ের সূত্রেই কেনা হয়েছিল সেকেন্ড হ্যান্ড দুটি বাইক। যেগুলি ব্যবহার করা হয়েছিল ডাকাতির কাজে। পুলিসের হাত থেকে বাঁচতে ঘন ঘন ঠিকানা বদল করে দেওয়া, লুটের সোনা বিক্রির জন্য বিহারের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি করেছিল এই মহিলা।
এদিকে, ডাকাত দলটি প্রথমে বিহার থেকে আসে আসানসোলের হীরাপুরে। সেখানে ঘর ভাড়ার ব্যবস্থা করে দেয় চাচি নিজেই। এরপর মে মাসে গোটা দলটি এসে পৌঁছায় হাওড়ার অঙ্কুরহাটি কালীতলায়। ঘর ভাড়া নিয়ে প্রায় একমাস সেখানে থাকে তারা। ডোমজুড়ের গোটা সোনার মার্কেট জুড়ে তারা রেকি করে। তাতে মূল লক্ষ্যই ছিল, এমন কোন দোকান, যাকে টার্গেট করলেও, বাইরে থেকে বোঝা যাবে না। এই শর্তেই খুঁজে পাওয়া যায় ফোকর দোকান এলাকার ওই স্বর্ণ বিপণি। যে দোকানে লুটপাট চালালেও, বাইরে থেকে কিছু বোঝা যাবে না। ডাকাতির দিন রীতিমতো আধঘন্টা ধরে চলে অ্যাকশন। বন্দুক উঁচিয়ে ভয় দেখানো, বন্দুকের বাঁট দিয়ে দোকান মালিকের মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার পর এবং বিভিন্ন শো-কেস থেকে একে একে সোনার গয়না লুট করা হয়েছিল। কিন্তু তা সত্বেও জনবহুল ওই এলাকায় কাকপক্ষীও টের পায়নি। উল্লেখ্য, ডাকাতি করতে আসা দুষ্কৃতীদের মধ্যে বিকাশ এবং অলোককে গ্রেপ্তার করতে পেরেছে পুলিস। অপর দুষ্কৃতী মণীশকেও হেফাজতে পাওয়ার বিষয়টিও প্রায় চূড়ান্ত। তদন্তকারীদের দাবি, এই ঘটনায় আরও একজন যুক্ত রয়েছে। ডাকাতির দিন চার সদস্যের দলে ছিল সে। আপাতত তার খোঁজ মেলেনি। ইতিমধ্যেই তাকে বাগে আনতে বিহারের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চলছে। পাশাপাশি লুটের সোনা উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন তদন্তকারীরা। নগরপাল জানিয়েছেন, নতুন গ্যাং তৈরি করেছিল রবীন্দ্র সাহানি ও চাচি। মূলত সমস্তিপুর, বেগুসারাই এলাকাকেই তারা 'বেস 'হিসাবে ব্যবহার করত। আমাদের কাছে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ছাড়া আর কোনও তথ্য-প্রমাণ ছিল না। তা সত্ত্বেও, আমরা এত বড় ডাকাতির কিনারা করে ফেলতে পারছি। আমাদের গোয়েন্দা এবং ডোমজুড় থানার যৌথ দল অভাবনীয় কাজ করেছে। দ্রুত এই ঘটনায় শেষ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে যবনিকা পতন করা হবে।