• খেতে আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা কেজি দরে, অতিরিক্ত ১০-১৫ টাকা কেন দেব? সরব সাধারণ মানুষ  
    বর্তমান | ১২ জুলাই ২০২৪
  • অমিত চৌধুরী, তারকেশ্বর: বাজারে গেলেই ছ্যাঁকা খেতে হচ্ছে। আলু সহ সমস্ত ধরনের সব্জির দাম আকাশছোঁয়া। কিন্তু চড়া দাম শুনে এটা ভাবার কোনও কারণ নেই যে কৃষকরা তাঁদের উৎপাদিত ফসলের খুব ভালো দাম পাচ্ছেন! হুগলির চাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে দামের ক্ষেত্রে এই অসামঞ্জস্য আরও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। যেমন, চাষিরা ১০-১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন পটল। সেই পটল বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা। হিমঘরে রাখা আলু চাষিরা বাইরে এনে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। বাজারে সেই আলুর দাম ৩৫-৪০ টাকা! উৎপাদক এবং খুচরো ক্রেতার মাঝে দরের এই বিস্তর ফারাক নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন মূল্যবৃদ্ধিতে জেরবার মানুষ। তাঁদের প্রশ্ন, মাঝখানে দামটা এতটা বাড়াচ্ছে কে? ফড়ে বা মধ্যসত্ত্বভোগীদের উপর কি প্রশাসনের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই? 


    তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কড়া বার্তা দেওয়ার পর পরিস্থিতি কিছুটা হলেও বদলাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, হিমঘরে ২৫ শতাংশ রেখে বাকি আলু বের করতে হবে। ‌তারপরই দেখা গেল, বস্তা প্রতি প্রায় ৫০ টাকা কমেছে আলুর দাম। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, ফড়ে ছাড়াও আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণ করে এক শ্রেণির বিত্তশালী লোক। তাঁদের ‘স্টকিস্ট’ বলা হয়। এঁদের মধ্যে রয়েছেন সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সহ বিবিধ পেশার লোকজন। তাঁরা আলু ওঠার সময় বা কিছুদিন পরে আলু কিনে হিমঘরে রাখেন। কোথাও চাষিদের নামে, কোথাও আবার নিজের আত্মীয়-পরিজনের নামে হিমঘরে আলু রাখেন তাঁরা। তাই প্রকৃতপক্ষে কারা এই ‘স্টকিস্ট’, তা সাধারণভাবে খুঁজে পাওয়াও বেশ  মুশকিল। ভালো দাম মিলবে বুঝে তাঁরা আলু বিক্রি করেন ফড়েদের কাছে। চাষিরাও হিমঘর থেকে আলু বার করে ফড়েদের বিক্রি করেন। তারকেশ্বরের একটি হিমঘরের ম্যানেজার অমল চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের হিমঘর থেকে প্রায় ২৭ শতাংশ আলু বেরিয়ে গিয়েছে।’ পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক লালু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘এ বছর হিমঘরে প্রায় ১২ কোটি ৫৫ লক্ষ প্যাকেট আলু রাখা হয়েছিল। এখনো প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস হিমঘরের আলু বাজারে থাকবে। সেই অনুযায়ী প্রতি মাসে ৬ লক্ষ মেট্রিক টন করে আলু বেরবে। আমাদের হিসেবে তাই সঠিক পরিমাণেই আলু বেরচ্ছে। এবার আলু হিমঘরে ঢোকানোর সময় কেজি প্রতি খরচ পড়েছিল ১৭ টাকা। হিমঘরের ভাড়া, বাছাই মজুরী, পরিবহণ নিয়ে এখন পাইকারি দর হচ্ছে ২৩-২৭ টাকা। খুচরো বাজারে কোথায় কেন দাম বাড়ছে, সেটা স্পষ্ট নয়। তবে মঙ্গলবারে তুলনায় বুধবার বস্তা প্রতি ৫০ টাকা কমেছে আলুর দাম।’


    সব্জির ক্ষেত্রেও চাষিরা লাভ পাচ্ছেন সামান্যই। তারকেশ্বর কেশবচকের কৃষক চণ্ডীচরণ খাড়া ও মাণিক সামন্ত বলেন, ‘আমরা পটল বিক্রি করছি ১০-১৫ টাকা কেজি দরে। আমাদের যে পরিমাণ সব্জি বিক্রি করতে হয়, তা খুচরো বিক্রেতারা কিনতে পারবেন না। বাধ্য হয়ে পাইকারি দরে বিক্রি করতে হয়। অথচ আমাদের হাত থেকে ১৫ টাকার পটল বাজারে গিয়েই হয়ে যাচ্ছে ৬০ টাকা! আমরা তো বাড়তি কোনও লাভ পাচ্ছি না। উল্টে কীটনাশকের দাম সহ চাষের খরচ সব বেড়েছে। মাঝখান থেকে কারা দাঁও মারছে, সেটা সরকার দেখুক।’ তন্ময় দাস নামে এক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সঠিক তদন্ত হলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে, কোন সুযোগসন্ধানীরা এভাবে দাম বাড়াচ্ছে। এক-দু’জনকে ধরপাকড় করলেই দাম কমে যাবে।’ এই প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি যে পদক্ষেপ করেছেন, তাকে স্বাগত জানিয়েছেন ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ মানুষ সকলেই।
  • Link to this news (বর্তমান)