• মমতার হুঁশিয়ারির পর বিদ্যুৎ অপচয়ের অডিট শুরু, পূর্তদপ্তরের দৈনিক খরচ ৫ লক্ষ
    বর্তমান | ১২ জুলাই ২০২৪
  • দেবাঞ্জন দাস, কলকাতা: পূর্তদপ্তরের একদিনের বিদ্যুৎ খরচ ৫ লক্ষ টাকারও বেশি! আর তিনমাসের বিল? ৪ কোটি ৭০ লক্ষ। বিদ্যুৎ বাবদ মাসে বা প্রতি তিনমাসে ঠিক কত টাকা খরচ হয়, তার কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্যই ছিল না দপ্তরগুলিতে। ‘লাগে টাকা, দেবে গৌরী সেন’—এহেন মানসিকতা যেন ক্রমেই গ্রাস করছিল গোটা সিস্টেমকে। বিদ্যুতের অপচয়, আর লাগাতার খরচ বৃদ্ধি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উষ্মা এবং ক্ষোভ সামনে আসার পরই নিজেদের বিদ্যুৎ খরচে ‘রাশ’ টানার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বিভিন্ন দপ্তর। এই পর্বেই পূর্তদপ্তর সামনে এনেছে গত এপ্রিল মাস থেকে চলতি জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তাদের অফিস, গেস্টহাউস, ইনসপেকশন বাংলো, স্ট্যাক ইয়ার্ড সহ নানা ক্ষেত্রের বিদ্যুৎ খরচের হিসেব। আর তাতেই চক্ষু চড়কগাছ নবান্নের শীর্ষস্তরের।


    নবান্ন সূত্রের খবর, প্রথম দপ্তর হিসেবে বিদ্যুতের খরচ সামনে আনল পূর্ত বিভাগই। তবে সেচ-জলপথ, পঞ্চায়েত, পরিবহণ, পুর-নগরোন্নয়ন সহ বিভিন্ন ‘লাইন’ দপ্তরের বিদ্যুৎ অপচয় বন্ধে যে অডিট প্রক্রিয়া চলছে, তা সামনে এলে বিস্ময় যে আরও বাড়বে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ওই সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিন প্রায় ১০ লক্ষ টাকা বিদ্যুৎ খরচ করছে, এমন দপ্তরের হদিশও মিলেছে এই পর্বে। শীর্ষ কর্তারা মানছেন, ‘অপচয়’ না হলে এহেন বিদ্যুৎ বিল আসার কথাই নয়। সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ তথা গোটা রাজ্যের ভ্রমণপিপাসু মানুষের ‘হেরিটেজ’ হলং বন বাংলো অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। কারণ অনুসন্ধানে নেমে সম্ভাব্য যে বিষয়টি উঠে এসেছে, তা হল, শর্ট সার্কিট। বিস্ফোরণ হয়েছে একটি এয়ার কন্ডিশনার (এসি) মেশিনে। তা থেকেই ছড়িয়েছে আগুন। ইঁদুরে তার কেটেছে? নাকি বাংলোর পর্যটক শূন্য কামরায় বন্ধই করা হয়নি এসি মেশিন? অপচয়? নাকি দায়িত্বহীনতা? তদন্ত চলছে। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ খরচ নিয়ে চলতি মাসেই নবান্ন সভাঘরের প্রশাসনিক বৈঠকে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিদ্যুতের অপচয় বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। 


    মুখ্যমন্ত্রীর এই অসন্তোষের পরই নড়েচড়ে বসেছে বিভিন্ন দপ্তর। দ্রুত পদক্ষেপ নেয় পূর্তদপ্তর। গত ৮ জুলাই দপ্তরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার (ওয়ার্কস) ইলেকট্রিক্যাল (হেড কোয়ার্টার অ্যান্ড প্ল্যানিং) একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেন। সেখানেই দপ্তরের বিদ্যুৎ খরচের হিসেব দেওয়া হয়েছে। ওই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, পূর্ত দপ্তরের ইলেকট্রিক্যাল, রোডস, এনএইচ, সোশ্যাল সেক্টর এবং সিভিল শাখার মোট ৮৮৭টি মিটারে গত ৮ এপ্রিল থেকে ৮ জুলাই বেলা দেড়টা পর্যন্ত রিডিং অনুযায়ী, বিদ্যুৎ খরচ হয়েছে ৪ কোটি ৬৯ লক্ষ ৭২ হাজার ৪০১ টাকা। তবে একটা বিষয় নিশ্চিত, পূর্তদপ্তর ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎ অপচয় রুখতে বাড়তি উদ্যোগ নিয়েছে। দপ্তরের মন্ত্রী পুলক রায় নিজেই জানিয়েছেন, আগামী তিনমাসের মধ্যে বিদ্যুৎ বিলে সচেতনতার ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাবে।
  • Link to this news (বর্তমান)