নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: যত্রতত্র অবৈধভাবে তোলা হচ্ছে ভূগর্ভস্থ জল। সেই জল ২০ লিটারের জারে রমরমিয়ে চলছে কারবার। সেই জলের গুণগত মান যাচাই তো দূরঅস্ত, অনুমোদনহীন এই জলই দেদার বিকোচ্ছে গৃহস্থের বাড়িতে। পানীয় জলের এই রিফিলিং সেন্টারের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নিতে পারছে না প্রশাসন। কারণ তাদের হাতে এ সংক্রান্ত কোনও তথ্য নেই।
এই জল পানীয় হিসেবে ব্যবহার করেন বহু মানুষ। গুণগত মান যাচাই না হওয়ায় এর থেকে বিপদের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। ক্ষতি হতে পারে শরীরের। হেপাটাইটিস, টাইফয়েড, ডায়েরিয়া, আন্ত্রিকের মতো জলবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে এলাকায়। এমনই আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বড়সড় সমস্যার মুখে পড়তে পারে।
বালি-জগাছা ব্লকে মোট আটটি পঞ্চায়েত রয়েছে। গত কয়েক বছরে শহর লাগোয়া এই ব্লকে জনসংখ্যা বিপুলভাবে বেড়েছে। অলিগলিতে মাথা তুলেছে বহুতল। ফলে পানীয় জলের চাহিদাও সেই অনুপাতে বেড়েছে। ব্লকের সবক’টি পঞ্চায়েতে পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ করা হলেও সর্বত্র তা পর্যাপ্ত নয়। এই চাহিদা পূরণ করে ২০ লিটারের পানীয় জলের জার। অলিগলিতে বেআইনিভাবে গজিয়ে উঠেছে জলের কারখানা। সেখানে ভূগর্ভের জল তুলে জারবন্দি করে বিক্রি করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। সরকারি অনুমোদন ছাড়াই কেউ বাড়িতে, কেউ দোকান ভাড়া নিয়ে, আবার কেউ ফাঁকা জমি লিজ নিয়ে বোরিং মেশিন বসাচ্ছে। কুড়ি লিটারের সেই জলের জার কোথাও বিকোচ্ছে ২০ টাকায়, কোথাও আবার ১৫ টাকায়। প্রশাসন সূত্রে খবর, গোটা ব্লকে অবৈধভাবে জল তুলে বিক্রির শতাধিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। তাদের কারও কাছেই জলের গুণগত মান যাচাইয়ের (ফ্যাসাই) সার্টিফিকেট, অনুমোদনপত্র, এমনকী ট্রেড লাইসেন্স পর্যন্ত নেই। ভূগর্ভের কোন স্তর থেকে জল তোলা হচ্ছে, তা পানের যোগ্য কি না, তা জানা যাচ্ছে না। দিনে জল তোলার সর্বোচ্চ সীমা কতটা, তা না জেনেই বোরিং মেশিন চালানো হচ্ছে। ফলে ওই জারবন্দি জলের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
ব্লকের এক আধিকারিক বলেন, প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে অলিগলিতে এই ধরনের বেআইনি ব্যবসা চলছে। আমরা দ্রুত এই ধরনের বেআইনি ব্যবসার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করব। বালি-জগাছা পঞ্চায়েত সমিতির এক সদস্য বলেন, আমার এলাকাতেই এমন প্রায় কুড়িটি সেন্টার রয়েছে, যেখানে অবৈধভাবে দল তোলা হচ্ছে। সরকারি ছাড়পত্র ছাড়াই প্রত্যেকটি রিফিলিং সেন্টারে এই ব্যবসা চলছে। পানীয় জল নিয়ে অবৈধ ব্যবসা বরদাস্ত করা হবে না।
প্রশাসনের দাবি, অনেক সময় ভূগর্ভে উপযুক্ত স্তর পর্যন্ত পাইপ না নামিয়েই জল তুলে নেওয়া হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের শরীরে যেমন ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনই আগামী দিনে ভূগর্ভস্থ জলের সঙ্কট তৈরি হতে পারে। বাসিন্দারা চাইছেন, হয় সরকার এগুলির উপর নজরদারি চালাক, না হয় অভিযান চালিয়ে এইসব অবৈধ সেন্টার বন্ধ করে দিক।