• চাইনিজের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে পাস্তা ও পিৎজা, কলকাতায় পিছিয়ে বিরিয়ানি
    বর্তমান | ১২ জুলাই ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: যাঁদের বাড়ির রান্না করা ভাত-ডাল-চচ্চড়ি একঘেয়ে লাগে, তাঁরা রেস্তরাঁয় ভিড় জমান কোন স্বাদের লোভে? সিংহভাগ কলকাতাবাসীর উত্তর হবে, চাইনিজ খাবার। চিলি চিকেন-মাঞ্চুরিয়ান, চাউমিন বা ফ্রায়েড রাইসের যে বিপুল জনপ্রিয়তা, তাকে অস্বীকার করবে কে? এদিকে বিরিয়ানি যেভাবে রসনাতৃপ্তির অন্যতম খাদ্য হয়ে উঠছে, তা কি চাইনিজ মেনুকে কিছুটা চাপে ফেলেছে? সাম্প্রতিক সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, কলকাতায় আপামর রেস্তরাঁ-বিলাসীদের পছন্দের তালিকায় চাইনিজ ডিশের জনপ্রিয়তাই শীর্ষে। এছাড়া নিভু আলোর ফাইন ডাইনিং বা বাড়িতে বসে অনলাইনে অর্ডার— চাইনিজের ঘাড়ে শ্বাস ফেলছে ইতালিয়ান পিৎজা-পাস্তা। আশ্চর্যের বিষয়, মূল্যবৃদ্ধির বাজারে রেস্ত যতই কমজোরি থাকুক না কেন, বাইরে খেতে গেলে বাঙালিরা মাথাপিছু খরচ করে ৯৬০ টাকা।


    অনলাইনে খাবার অর্ডারের ক্ষেত্রে গত কয়েক বছর ধরে দেশজুড়ে শীর্ষস্থানে রয়েছে চিকেন বিরিয়ানি। তবে কলকাতায় রেস্তরাঁয় বসে খাওয়াদাওয়ার চিত্রটা একটু আলাদা। ‘ন্যাশনাল রেস্টুর‌্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া’র রিপোর্ট বলছে, ১০০ জনের মধ্যে ৫২ জন বাইরে খেতে যাওয়া বলতে বোঝেন চাইনিজ। ৪৫ জনের ক্ষেত্রে পছন্দ ইতালিয়ান খাবার। ৪৪ জনের ক্ষেত্রে পছন্দ ভারতীয় ভাজাভুজি। তা ফিশফ্রাই হতে পারে বা চিকেন কবিরাজি। ছোলে বাটোরার মতো উত্তর ভারতীয় পদ বা বিরিয়ানি-চাঁপের মতো মোগলাই খানা পছন্দ করেন ৪২ জন। কলকাতার রেস্তরাঁয় বসে দোসা-উত্তপমের মতো দক্ষিণ ভারতীয় খাবারের ভক্ত ৩২ জন। বার্গার, টাকো বা হটডগের মতো আমেরিকান বা মেক্সিকান খাবার পছন্দ ২৭ জনের। এর অর্থ, একই ব্যক্তি রেস্তরাঁয় গিয়ে বিভিন্ন রকমের খাবার চেখে দেখেন।


    কলকাতাবাসী কাদের সঙ্গে খেতে যেতে পছন্দ করেন? তথ্য বলছে, সিংহভাগ মানুষ খেতে যান পরিবারের সঙ্গে। সেই হার ৬১ শতাংশ। আর প্রেমিক-প্রেমিকাদের হারকে পিছনে ফেলেছে বন্ধুবান্ধবরা। বন্ধুদের নিয়ে ডাইন আউটের হার ১৬ শতাংশ। জুটিতে খেতে যাওয়া কিছুটা পিছিয়ে, ১১ শতাংশ। মাত্র দু’শতাংশ মানুষ তাঁদের সহকর্মীদের নিয়ে যান খাওয়াতে। আর ১০ শতাংশ খাদ্যপ্রেমী কারও জন্য অপেক্ষা না করে, নিজেরাই পৌঁছে যান রেস্তরাঁয়। কতদিন অন্তর বাইরে খেতে যাওয়ার ঝোঁক কলকাতাবাসীর? রিপোর্ট বলছে, এখানকার বাসিন্দারা যতবার সদলবলে রেস্তরাঁয় বসে খান, তার চেয়ে বেশি সময় তাঁরা ঘরে বসে অনলাইনে খাবার অর্ডার করেন। গড়ে প্রায় ছ’দিন অন্তর কলকাতার খাদ্যরসিকরা বাড়িতে খাবার আনেন। প্রায় ন’দিন অন্তর তাঁরা খেতে যান। আর মাথাপিছু খরচ করেন ৯৬০ টাকা।


    শুধু কলকাতাতেই প্রায় ৩৪ হাজার খাবার-ঘর রয়েছে ছড়িয়েছিটিয়ে। এর মধ্যে ফাস্টফুড পাওয়া যায় প্রায় সাড়ে ন’হাজার জায়গায়। রেস্তরাঁর সংখ্যা আট হাজার ৬০০। অতি অভিজাত রেস্তরাঁর সংখ্যা ৯৭টি। ক্যাফে আছে দেড় হাজারের বেশি। ২৪০টি লাউঞ্জ, পাব বা বারে খাবার ও পানীয় পরিবেশন করা হয়। এছাড়াও আছে অজস্র খাবার দোকান, যেগুলি মূলত অসংগঠিতভাবে গড়ে উঠেছে। রিপোর্টটি বলছে, সংগঠিত ক্ষেত্রের রেস্তরাঁ থেকে কলকাতার আয় হয় আট হাজার কোটি টাকারও বেশি।
  • Link to this news (বর্তমান)