রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের আউটডোর থেকে প্রাপ্ত প্রেসক্রিপশনে চোখ বুলিয়ে চোখ কপালে স্বাস্থ্যভবনের কর্তাদের। তথ্য বলছে একেকজন চিকিৎসক একদিনে ৮০০-৯০০ রোগী দেখছেন! শুধু দেখছেন বললে ভুল। রোগীর কেস হিস্ট্রি শুনে প্রেসক্রিপশনে ওষুধও লিখেছেন। সেই তথ্য জমা হচ্ছে স্বাস্থ্যভবনের ‘হেলথ ম্যানজেমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম’ পোর্টালে। এই তথ্য দেখে একই সঙ্গে বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ স্বাস্থ্যভবন। আবার এমন চিকিৎসকরা রয়েছেন দিনে সব মিলিয়ে ৮০-১২০টি রোগী দেখছেন।
আপাতভাবে যাঁরা রোগী দেখায় রের্কড গড়েছেন সাপ্তাহিক বৈঠকে তাঁদের পারফরম্যান্স রিপোর্ট দেখে খুশি হয় হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যভবন। কিন্তু সবটা তলিয়ে দেখে রীতিমতো হতভম্ব স্বাস্থ্যকর্তারা।
রাজ্যের ২৮টি মেডিক্যাল কলেজ (Medical college) ও ২৭টি জেলা হাসপাতালের আউটডোর রিপোর্ট নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন স্বাস্থ্যকর্তারা। ছিলেন অধিকর্তা চিকিৎসক সিদ্ধার্থ নিয়োগী, স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা চিকিৎসক কৌস্তভ নায়েক। এবং সরকারি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষরা। সেখানেই কার্যত বিস্ফোরণ ঘটেছে।
নিয়ম অনুযায়ী, আউটডোরে একজন চিকিৎসককে আট ঘণ্টা রোগী দেখতে হয়। অর্থাৎ ৪৮০ মিনিট। প্রশ্ন উঠেছে, সেই চিকিৎসক যদি টিফিন না করে, বাথরুমে না গিয়ে টানা আটঘণ্টা রোগী দেখেন তাহলে কী করে ৯৫০-৯১৮ জন রোগী দেখেন?
স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী রিপোর্ট দেখে রীতিমতো বিস্মিত। তিনি বলেন, “একজন রোগীকে ভাল করে দেখতে অন্তত ২০-৩০ মিনিট দরকার। পুরনো রোগী হলে কেস হিস্ট্রি জানা থাকলে ১০মিনিট। কিন্তু ‘হেলথ ম্যানজেমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম’ রিপোর্টকে মান্যতা দিলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক গড়ে ৩ সেকেন্ডে কী করে একজন রোগী দেখেন? তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেওয়া যায় অভিজ্ঞ নার্স বা জুনিয়র ডাক্তার সহকারী হিসাবে থাকেন তা হলেও কী করে সম্ভব। প্রেসক্রিপশন লিখতেও তো সময় লাগে?”
আবার এমন তথ্যও পাঠানো হয়েছে কলকাতার এনআরএস, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ, আরজি কর অথবা পুরুলিয়া মেডিক্যাল কলেজের আউটডোরে টেনেটুনে কোনও চিকিৎসক সপ্তাহে একদিন ১৫ রোগী দেখেননি? স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধির্কতা দপ্তরের এক কর্তার কটাক্ষ, “তাহলে কী রোগ-বালাই কমে গেল?”
ভূতুড়ে রোগী, ভূতুড়ে প্রেসক্রিপশনের রোগ থেকে মুক্ত নয় রাজ্যের একমাত্র মাল্টি সুপার স্পেশালিটি এসএসকেএমও। জেনারেল মেডিসিনের আউটডোরে গত সপ্তাহে এক চিকিৎসক মাত্র ১০ জন রোগী দেখেছেন। হেলথ ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম পোর্টালের সঙ্গে যুক্ত এক প্রবীণ চিকিৎসকের কথায়, “হয় সিস্টেমে গোলমাল। অথবা রোগ কমেছে। দুটো একসঙ্গে সম্ভব নয়।”
‘হেলথ ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম’ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে নাম আলাদা হলেও একই এলাকা থেকে অন্তত ২০-২৫ জন রোগীর নাম-ঠিকানা। এমনকী প্রেসক্রিপশনেও একই ওষুধ! এমনটা কী করে হয়? প্রশ্ন চিকিৎসক মহলে। প্রশ্ন স্বাস্থ্যভবনেও। আউটডোরের মতো টেলিমেডিসিনেও ভূতুড়ে রোগী, ভূতুড়ে প্রেসক্রিপশন নিয়ে অসংখ্য অভিযোগ। এক শীর্ষকর্তার কথায়, “রাজ্য সরকার জলের মতো অর্থ খরচ করছে রোগীর চিকিৎসায়। কিন্তু লক্ষ্য কতটা পূরণ হচ্ছে খতিয়ে দেখার সময় এসেছে।”