নিজস্ব প্রতিনিধি, মালদহ: অভিযানের পরও কেন দাম কমছে না, সেই রহস্য ফাঁস হল শুক্রবার। অভিযানে গিয়ে প্রশাসনের আধিকারিকরা দেখলেন ১৮০ টাকা কেজি আদা গুদাম থেকে বের হওয়ার পর বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। শুক্রবার মালদহের বাজারে অভিযান চালাতে গিয়ে ‘টাস্ক ফোর্সে’র আধিকারিকদের চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার মতো অবস্থা।
এদিন সকালে মালদহের নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির এক ব্যবসায়ী আধিকারিকদের কাছে বিষয়টি স্বীকার করে নেন। ওই বিক্রেতা আদার দাম এভাবে বৃদ্ধির ব্যাপারে আধিকারিকদের প্রশ্নের কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। আদার মতোই অন্যান্য আনাজপাতির দামও দেড়-দ্বিগুণ করে দেওয়া হচ্ছে। পাইকারি ও খুচরো বাজারের মধ্যে এই বিস্তর ফারাক প্রশাসনকে ভাবিয়ে তুলেছে। জেলাজুড়ে একশ্রেণির ব্যবসায়ী কালোবাজারি করছে বলে ক্রেতারা অভিযোগ তুলেছেন। আদার পাশাপাশি আলু ও পেঁয়াজ আকাশছোঁয়া দরে বিক্রি হচ্ছে।
মালদহের জেলাশাসক নীতিন সিঙ্ঘানিয়া বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ও আনাজপাতির ইচ্ছামতো দাম বৃদ্ধি করা যায় না। খুচরো বিক্রেতাদের সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে। একই কাজ করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। টাস্ক ফোর্স গড়ে জেলাজুড়ে অভিযান চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক পদমর্যাদার এক আধিকারিক নজরদারি চালাচ্ছেন। দ্রুত দাম নাগালের মধ্যে চলে আসবে বলে আমরা আশাবাদী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সব্জি বিক্রেতা বলেন, আমরা খুচরো বাজারে সামগ্রী বিক্রি করি। মহাজনরা যে দামে আমাদের দেন, তার থেকে কেজিতে দু-দশ টাকা বেশি দাম নেওয়া হয়। গত কয়েকদিন জেলায় বৃষ্টি হচ্ছে। তার ফলে জোগানে কিছুটা ভাটা পড়েছে। সেই কারণে দাম বাড়ছে। তবে আদার দাম এক লাফে কেজিতে ১২০ টাকা বৃদ্ধির বিষয়টি শুনে আমরাও অবাক হয়েছি।
মালদহের ছোট হাট ও বাজারগুলিতে গত কয়েকদিন ধরেই শাকসব্জির দাম লাগাতার বৃদ্ধি পাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জেলা প্রশাসন টাস্ক ফোর্স গড়ে অভিযান শুরু করেছে। এদিন, আধিকারিকরা প্রথমে ইংলিশবাজার শহরের নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতিতে যান। সেখানেই জেলার সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার ও বেশ কয়েকটি বড় গুদাম রয়েছে। সেখানে আলু সহ অন্যান্য আনাজ মজুত করে জেলার খুচরো বাজারগুলিতে পাঠানো হয়। মজুতদাররাই বর্তমানে দাম নিয়ন্ত্রণ করছে বলে ক্রেতাদের অভিযোগ। এদিন ইংলিশবাজার ব্লকের অমৃতি বাজারেও অভিযান চলে।
এদিকে, মালদহে বৃহস্পতিবারের মতো শুক্রবারেও বাজারে আনাজের দাম চড়া ছিল। প্রশাসনের ধারাবাহিক অভিযানেও দাম নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এদিন প্রতি কেজি আলু ৩০-৩৫ টাকা, পেঁয়াজ ৪৫ টাকা, আদা ৩০০, রসুন ২৫০-৩০০, কাঁচা লঙ্কা ৮০, পটল ৫০ টাকা, বেগুন ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। শশার দাম গত কয়েকদিনে ৪০ থেকে বেড়ে ৮০ টাকা হয়ে গিয়েছে। এভাবে মূল্যবৃদ্ধি হলে শাকসব্জি ক্রমশ সাধারণের নাগালের বাইরে চলে যাবে বলে বাসিন্দাদের আশঙ্কা।
ইংলিশবাজার শহরের তমাল সেন, ছায়া চৌধুরী বলেন, গত ষাট-সত্তরের দশকে কালোবাজারি হতো বলে বয়স্কদের মুখে শুনেছি। এখন পরিস্থিতি অনেকটা সেদিকেই গড়াচ্ছে। এভাবে চললে আর বাজার যাওয়া হবে না।