নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে দপ্তরে দপ্তরে ঘুরে হয়রান দাঁতনের মহিলা
বর্তমান | ১৩ জুলাই ২০২৪
সংবাদদাতা, বেলদা: দিব্যি হেঁটে চলে বেড়াচ্ছেন। কয়েকদিন আগে লোকসভা নির্বাচনে ভোটও দিয়েছেন। কিন্তু সরকারি খাতায় আচমকা হয়ে গেলেন ‘মৃত’। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে ভাতা বৃদ্ধি হয়েছিল চলতি বছরের এপ্রিল মাসে। সেই মাস থেকেই রহস্যময় কারণে ভাতা বন্ধ গেল শোভা বেরা নামে এই গৃহবধূর। আতান্তরে পড়ে এখন নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে তিন মাস ধরে বিভিন্ন অফিসের দরজায় দরজায় ঘুরছেন। ‘বেঁচে আছি প্রমাণ করতে আর কী কী করতে হবে?’ জনে জনে জিজ্ঞেস করছেন দাঁতন-এক নম্বর ব্লকের তররুই পঞ্চায়েতের জ্যোতি গ্রামের শোভাদেবী।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। জনপ্রিয় এই প্রকল্পের কারণে মহিলারা দলে দলে ভোট দিয়েছে তৃণমূলকে। এই প্রকল্পে ২৫-৬০ বছর বয়সি মহিলারা প্রতি মাসে ভাতা পান। এপ্রিল মাস থেকে প্রকল্পের ভাতা দ্বিগুণ করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাধারণ মহিলারা এপ্রিল মাস থেকে পাচ্ছেন হাজার টাকা। তফসিলি জাতি ও উপজাতির মহিলারা পাচ্ছেন ১২০০ টাকা। আর এপ্রিল থেকে সরকারি খাতায় শোভাদেবী হয়ে গিয়েছেন মৃত।
‘এপ্রিল মাস থেকে টাকা অ্যাকাউন্টে ঢুকছে না। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, সরকারি পোর্টালে আমি নাকি মৃত। সেই কারণেই আমার ভাতা বন্ধ আছে। তারপর তিন মাস ধরে আমি বেঁচে আছি প্রমাণ করতে গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে ব্লক অফিস ছুটছি। কিন্তু সুরাহা হচ্ছে না’-বললেন শোভাদেবী। শুক্রবারও স্বামীর সঙ্গে দাঁতন এক নম্বর বিডিও অফিসে এসেছিলেন তিনি। জয়েন্ট বিডিওর কাছে সমস্ত নথি ও প্রমাণপত্র ফের জমা করেন। তারপর বলেন, ‘এপ্রিল থেকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা ডবল হয়ে যাবে জানতাম। মাসের মাঝামাঝি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখি, কোনও টাকা ঢোকেনি। ভেবেছিলাম হয়তো টাকা আসতে দেরি হবে। কিন্তু মে মাসেও দেখি, ভাতার টাকা আসেনি। এরপর পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ করে জানতে পারি, সরকারি নথি অনুযায়ী আমি মৃত। তাই আমার ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’ টাকাটা সংসারের প্রয়োজনে আসত। তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপদের মুখে পড়েছেন শোভা। হতাশ হয়ে বললেন, ‘আমি একটা জলজ্যান্ত মানুষ। ভোট পর্যন্ত দিয়েছি। তার পরও আমাকে মৃত বলা হচ্ছে!’ জয়েন্ট বিডিও অরবিন্দ পাল বলেন, ‘ওই মহিলা আমার কাছে এসেছিলেন। খোঁজ নিয়ে দেখছি, কী কারণে এই ঘটনা ঘটেছে। কোনও টেকনিক্যাল ফল্ট নাকি ভুলবশত জন্ম-মৃত্যুর পোর্টালে তাঁর নাম উঠেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আশা করছি তাড়াতাড়ি এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’