• স্কুলেই মজলিস গুণধর টিচার ইনচার্জের, মদের গ্লাস হাতে গানে বিভোর, ক্লাস বন্ধ করে বিয়েবাড়ি ভাড়া  
    বর্তমান | ১৩ জুলাই ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: তাঁর একনায়কতন্ত্রেই খাস কলকাতার সরকারি স্কুল হয়ে উঠেছে ‘শৃঙ্খলাহীনতার আখড়া’! স্কুলছুটির পর মদ্যপানের আসরে, মাইক্রোফোন হাতে গলাও সাধেন তিনি। তাঁর সম্মতিতেই মাসিক ১০ হাজার ভাড়ায় স্কুল এখন ঠিকা শ্রমিকদের ‘মেস বাড়ি’। আবার তাঁর ইন্ধনেই যখন তখন ‘বিয়েবাড়ি’ হয়ে যায় স্কুলটি। সব ক্ষেত্রেই অভিযোগের তির, বন্দর এলাকার শ্রমিক বিদ্যালয়ের টিচার ইন চার্জের (টিআইসি) দিকে। টিআইসি’র নাম অজয়কুমার কোবিদ। নিজেকে অবশ্য ‘স্বেচ্ছাচারী’ মানতে নারাজ অজয়কুমার। বরং ‘কড়া’ হতে গিয়েই নাকি সবার বিরাগভাজন হয়েছেন—এমনটাই দাবি তাঁর। 


    কলকাতা বন্দরের ৪ নম্বর গেটের বিপরীতেই কোল ডক রোডে শ্রমিক বিদ্যালয়। দোতলা স্কুলবাড়ি। পড়ুয়ার সংখ্যা ১০০। শিক্ষক সাকুল্যে ৭ জন। পাঁচজন সহকারী শিক্ষক ও একজন মহিলা পার্শ্বশিক্ষক, টিচার-ইন-চার্জ অজয়কুমার। ২০০৫ সাল থেকে স্কুলের সঙ্গে যুক্ত। অভিযোগ, সেই সরকারি স্কুলকে কার্যত ব্যক্তিগত ‘সম্পত্তি’ বানিয়ে ফেলেছেন তিনি। তাঁর নামে দক্ষিণ বন্দর থানায় অভিযোগও জমা পড়েছে। 


    ১০ জুলাই ছিল স্কুল শিক্ষকদের ‘ঐক্যশ্রী’ প্রকল্পের কর্মসূচি। প্রত্যেক স্কুল থেকে একজন করে প্রতিনিধি সেখানে অংশ নেন। টিআইসি সেই দায়িত্ব দেন সহকারী শিক্ষক পবনকুমার গোন্দকে। কিন্তু, তাঁর মায়ের শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। তাই অন্য কাউকে সেই দায়িত্ব দেওয়ার জন্য আর্জি জানান পবন। অভিযোগ, এরপরেই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন অজয়কুমার। পবন বলেন, ‘অফিস ঘর থেকে ছুরি এনে আমার উপর চড়াও হন টিআইসি। অন্য দু’জন সহকারী শিক্ষক তাঁকে নিরস্ত করেন।’ প্রাণভয়ে দক্ষিণ বন্দর থানার দ্বারস্থ হন পবন। পুলিস জানিয়েছে, তদন্ত চলছে। এ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত অজয়কুমারের বক্তব্য, ‘স্কুলে এমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি।’ অভিযোগ মোতাবেক এলাকায় খোঁজখবর করতেই জানা গেল টিআইসি’র কর্মকাণ্ড। এলাকার নির্মাণ সংক্রান্ত কাজে যুক্ত ঠিকা শ্রমিকরা গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে রয়েছে স্কুলের দোতলার ‘মেস বাড়িতে’। মাসিক ভাড়াও ঠিক করে দিয়েছেন অজয়কুমার। স্কুলের পার্কিং লটে চলছে রান্নাবান্না। পড়ুয়াদের শৌচালয়ই ব্যবহার করছে শ্রমিকরা। পঠনপাঠনের সময়সীমার পরও স্কুল খোলা থাকে রাত ৯-১০টা পর্যন্ত। সন্ধ্যা থেকে শ্রমিকদের সঙ্গে মদ্যপানের আসরে যোগ দেন অভিযুক্ত। চলে তারস্বরে গান-বাজনা। টিআইসি’র দাবি, ‘সব মিথ্যা। আমি একটু কড়া হতেই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে।’ তবে একইসঙ্গে তাঁর আর্জি, ‘খবর করবেন না। আপনি স্কুলে আসুন। সব ব্যবস্থা করে দেব।’ এই ‘ব্যবস্থা’টা যে ঠিক কী, তা স্পষ্ট করেননি অজয়কুমার। 
  • Link to this news (বর্তমান)