অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত একাধিক কারখানা, গোডাউন কাজ হারানোর আশঙ্কায় বহু মানুষ
বর্তমান | ১৩ জুলাই ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হল দমদমের একাধিক কারখানা ও গোডাউন। গেঞ্জি ও ভেটেরনারি ওষুধ তৈরির কারখানা ছাড়াও বিভিন্ন নামকরা সংস্থার গুদামে মজুত থাকা যাবতীয় সামগ্রী পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। দমকলের ২০টি ইঞ্জিন প্রায় আট ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কয়েক কোটি টাকার। তবে দমকলের কর্মী ও কারখানার শ্রমিকদের সক্রিয়তায় কয়েকশো লিটার গ্যাস অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়। তা না হলে আরও বড় বিপর্যয় ঘটতে পারত। সেক্ষেত্রে আশাপাশের একাধিক আবাসন ও একটি রাবার ফ্যাক্টরিও আগুনের গ্রাসে চলে যেত বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ওই জায়গায় কার্যত এক ছাদের তলায় একাধিক কারখানা ও গোডাউন চললেও ছিল না কোনও অগ্নিনির্বাপণ পরিকাঠামো। ফলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু ফরেন্সিক তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দমদম পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের ২৯, যশোর রোডে কয়েক দশক আগে একটি লোহার কারখানা ছিল। পরবর্তীকালে ওই জায়গায় এক শেডের তলায় একাধিক কারখানা ও গোডাউন তৈরি হয়েছে। তার মধ্যে গেঞ্জি তৈরির কারখানায় তিন শিফটে প্রায় ৩০০ জন কাজ করেন।
বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটা নাগাদ একটি গোডাউনের এসি বিস্ফোরণ হয়ে আগুন লাগে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে। দাহ্য পদার্থ ঠাসা থাকায় মুহূর্তে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। গেঞ্জি কারখানায় রাতের শিফটে কর্মরত শ্রমিকরা দ্রুত বেরিয়ে এসে দমকলে ফোন করেন। কিন্তু দমকল আসার আগেই এলাকা কার্যত জতুগৃহের রূপ নেয়। আগুনের তাপে লোহার বিম ও টিনের সেড নুয়ে পড়ে। বেশ কয়েকটি জায়গায় দেওয়াল ভেঙে দমকল কর্মীরা আগুন নেভানোর কাজ করেন। সকাল ১১টা নাগাদ আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। রাতে ঘটনাস্থলে চিলেন গেঞ্জি কারখানার কর্মী বিশ্বজিৎ মাইতি, স্বরূপ দেবনাথরা। তাঁরা বলেন, ‘রাত আড়াইটার দিকে আমরা যখন স্নান করে ঘুমতে যাব যাব করছিলাম, আচমকা বোমা ফাটার মতো একটা শব্দ হয়। এরপর শর্ট সার্কিট হয়ে যায়। নাইট শিফটে কাজ করা শ্রমিকরা আমাদের বেরিয়ে যেতে বলে। কয়েকজন দমকলে ফোন করে। ঘন্টাখানেক পর দমকল আসে। কিছুটা আগে এলে হয়তো কিছু জিনিস বাঁচানো যেত।’ তাঁরাই জানালেন, থেকে ৪০ লিটারের ৪২টি গ্যাস সিলিন্ডার দমকল কর্মীরা কারখানার ভিতর থেকে না বের করলে ভয়াবহ পরিস্থিতি হতো। ওই ব্যবসায়িক কেন্দ্রের দেওয়াল লাগোয়া বহুতলের বাসিন্দারা তীব্র আতঙ্কে ছিলেন। আগুন ছড়ানোর আশঙ্কায় অনেকে বাড়ি থেকে নেমে আসেন। তবে বৃষ্টি ও দমকল কর্মীদের তৎপরতায় আগুন ছড়ায়নি। মন্ত্রী সুজিতবাবু বলেন, ‘ঘটনাস্থলে কোনও আগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা দেখতে পাইনি। এই ধরনের গাফিলতি একেবারেই বরদাস্ত করা হবে না। আগুন লাগার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ফরেন্সিক তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’