নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: জুলাই মাসের প্রায় অর্ধেক পেরনোর পরেও দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি বেশ কম। স্বভাবতই এই এলাকার চাষআবাদ নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজ্য সরকার। কৃষিজমিতে জলসেচসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে ২২ জুলাই বিশেষ বৈঠক ডেকেছে জলসম্পদ অনুসন্ধান দপ্তর। বিভাগীয় মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া জানান, বিভিন্ন জেলায় ভূগর্ভস্থ জলের কী অবস্থা তা খতিয়ে দেখা হবে। চাষিদের স্বার্থে বিশেষ কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, আলোচনা করা হবে তা নিয়ে। এখনও পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি খুবই হয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয় কি না সেদিকে বিশেষ নজর রাখা হয়েছে। কৃষিদপ্তরের মতামতও নেবেন তাঁরা।
এদিকে, আবহাওয়া দপ্তর শুক্রবারও জানিয়েছে, আপাতত দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে ভারী বৃষ্টিপাতের কোনও সম্ভাবনা নেই। মৌসুমি অক্ষরেখার প্রভাব ও বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা তৈরি হওয়ার জেরে শুক্রবার কলকাতাসহ দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলায় বৃষ্টির মাত্রা কিছুটা বাড়ে। কিন্তু এটা সাময়িক ব্যাপার বলে জানিয়েছেন আলিপুর আবহাওয়া অফিসের অধিকর্তা হবিবুর রহমান বিশ্বাস। শনিবারের পর দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির মাত্রা ফের কমে যাবে। ১ জুন থেকে এখনও পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গের বেশিরভাগ জেলাতেই বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে ৪০ শতাংশের বেশি! কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, জুলাই মাসে বৃষ্টিপাত কিছুটা বাড়লেও ধানচারা রোয়ার পরিস্থিতি অধিকাংশ জায়গায় এখনও হয়নি। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে পর পর দুটি নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে। তবে এর প্রভাবে ওড়িশা ও মধ্য ভারত বেশি বৃষ্টি পেতে পারে বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা।
সরকারি কর্তারা মনে করছেন, এরকম পরিস্থিতি চলতে থাকলে বর্ষাকালে আমন ধান চাষের জন্য কোনও কোনও জায়গায় সেচের জলের প্রয়োজন হতে পারে! রাজ্যের জলসম্পদমন্ত্রী জানান, রাজ্যের মোট সেচসেবিত জমির ৭৬ শতাংশে জল সরবরাহ করে তাঁর দপ্তর। মোট জমির পরিমাণ ৫৭ লক্ষ হেক্টর। বিভিন্ন বাঁধের জলাধার থেকে সেচখালের মাধ্যমে কিছু জমিতে জল পৌঁছে দেওয়া হয়। দুই দপ্তরের মধ্যে সমন্বয় বৈঠক আগামী দিনে হবে বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ, চাষিরা যেন কোনও সমস্যায় না পড়েন তা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। এই নির্দেশ কার্যকর করার জন্য সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাধারণ পরিস্থিতিতে পুকুর, জলাশয়, খাল প্রভৃতি জায়গায় সংরক্ষিত জল সেচের কাজে ব্যবহারে জোর দেয় জলসম্পদ দপ্তর। পরিবেশের স্বার্থে ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার কমানোর উপর জোর দেওয়া হয়েছে। মানসবাবু জানান, মুখমন্ত্রীর ‘জল ধরো জল ভরো’ নীতি মেনে রাজ্যেজুড়ে ৩ লক্ষ ৯৬ হাজার পুকুর খনন করা হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে তৈরি করা হয়েছে দেড়শোর বেশি চেক ড্যাম। এতে সেচের সুযোগ অনেকটাই বেড়েছে। কিন্তু বৃষ্টি কম হওয়ায় সংরক্ষণযোগ্য জলের পরিমাণ কমে যাবে। এই পরিস্থিতিতে ভূগর্ভস্থ জলের কী অবস্থা, সেই ব্যাপারে জেলার অফিসগুলিকে বিস্তারিত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।