• আড়িয়াদহের জায়ান্টের ক্লাব সিল, উদ্ধার রড ও ব্যাট
    এই সময় | ১৩ জুলাই ২০২৪
  • এই সময়, আড়িয়াদহ: প্রথমে মা-ছেলেকে রাস্তায় ফেলে পেটানো, তার পর একের পর এক নির্মম অত্যাচারের ভিডিয়ো সামনে আসায় রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে উঠেছে আড়িয়াদহ তালতলা স্পোর্টিং ক্লাব। প্রতিটি ক্ষেত্রেই নাম জড়িয়েছে শাসক ঘনিষ্ঠ জয়ন্ত সিং ওরফে জায়ান্ট ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে। শুক্রবার জায়ান্ট ও তার দুই শাগরেদকে নিয়ে ওই ক্লাব সিল করে দিল পুলিশ।এ দিন দুপুরে জায়ান্টের সঙ্গে প্রসেনজিৎ দাস ওরফে লাল্টু এবং সুদীপ সাহা ওরফে গুড্ডুকে নিয়ে তালতলা স্পোর্টিং ক্লাবে হাজির হয় পুলিশ। নেতৃত্বে ছিলেন ব্যারাকপুরের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অফ পুলিশ (বেলঘরিয়া) শ্রীমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। তিন জনকে ক্লাবের ভিতর ঢুকিয়ে পুলিশ ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়।

    পুলিশ সূত্রে খবর, ক্লাবের মধ্যেই তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ক্লাবকে ঘিরে কী ধরনের আড্ডা হতো, সালিশি সভা কী ভাবে করা হত তা জানতে চায় পুলিশ। ক্লাবের ভিতরে দু’টি লোহার রড এবং একটি ব্যাট পুলিশ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। সেগুলি দিয়েই সালিশি সভায় অত্যাচার করা হতো বলে অভিযুক্তরা পুলিশকে জানিয়েছে বলে সূত্রের খবর।

    প্রায় ২০ মিনিট জেরার পর ক্লাব থেকে বেরিয়ে পুলিশের জিপে তোলার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে রীতিমতো উত্তেজিত হয়ে পড়ে জায়ান্ট। সাংবাদিকদের দিকে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে ওই দুষ্কৃতীকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনারা কি ভিডিয়োতে আমাকে দেখেছেন?’ বিধায়ক মদন মিত্রের সঙ্গে তার ছবির প্রসঙ্গে জায়ান্ট বলে, ‘স্থানীয় বিধায়কের সঙ্গে ছবি থাকতেই পারে।’

    স্থানীয় বাসিন্দা রূপালি বিশ্বাস বলেন, ‘ক্লাবটি সিল করলেই হবে না, ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া উচিত।’ ব্যারাকপুরের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) অনুপম সিং বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থেই জায়ান্ট ও তার দুই শাগরেদকে ওই ক্লাবে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে কিছু তথ্য এবং লোহার রড ও ব্যাট উদ্ধার হয়েছে। যা তদন্তের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।’

    অন্যদিকে, বেআইনিভাবে জমি দখল করে তাতে পেল্লায় বাড়ি তৈরির অভিযোগ উঠেছিল জায়ান্টের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবারই কামারহাটি পুরসভা জানিয়ে দেয় পুরসভার রেকর্ডে ওই বাড়ির কোনও নকশা বা নথি নেই। পুরপ্রধান গোপাল সাহা শুক্রবার জানান, পুরসভার তরফে মাস্টার প্ল্যান নিয়ে ইঞ্জিনিয়াররা সেখানে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে নির্দিষ্ট ওই জমির দাগ নম্বর সংগ্রহ করে বিএলআরও দপ্তরে পাঠানো হয়।

    তা থেকে জানা গিয়েছে, যে অংশে জায়ান্টের প্রাসাদ তার পরিমাণ এক কাঠা আট ছটাক। জমির মালিক দিলীপ মুখোপাধ্যায়। যদিও ওই ব্যক্তির কোনও হদিস এখনও পাওয়া যায়নি। যে পুকুরের অংশ বুজিয়ে কিছুটা জমি বাড়িয়ে নিয়েছিল জায়ান্ট সেই পুকুরের মালিকের নাম তপন কুমার বিশ্বাস। পুরপ্রধান বলেন, ‘আমরা ওই জমি মালিকের খোঁজ করছি। পুরসভার তরফে আইনানুগ যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেওয়া হবে৷’

    এর মধ্যেই পুলিশকে কাজে লাগিয়ে বিরোধীকে শায়েস্তা করার অভিযোগ উঠল জয়ন্তের বিরুদ্ধে। জায়ান্টের বিরোধিতা করায় বেলঘরিয়ার বিজেপি নেতা তথা সমাজকর্মী মৌসম চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সম্প্রতি চারটে মামলা দায়ের করা হয়। একটি মামলায় গ্রেপ্তারের পর তিনি জামিন পেতেই, তাঁকে মাদক পাচারের মামলায় গ্রেপ্তার করে বেলঘরিয়া থানা।

    তার কাছ থেকে বাণিজ্যিক পরিমাণ মাদক উদ্ধার হয়েছে বলে দাবি পুলিশের। শুক্রবার হাইকোর্টে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার আবেদন জানিয়ে মৌসমের আইনজীবী দাবি করেন, এই মামলার তদন্তভার নারকোটিক কন্ট্রোল ব্যুরোকে দেওয়া হোক। মামলা দায়ের করার অনুমতি দেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা।
  • Link to this news (এই সময়)