একমাত্র সন্তানকে হাফ-ম্যাচ অস্থিমজ্জায় বাঁচালেন মা
এই সময় | ১৩ জুলাই ২০২৪
এই সময়: রক্তের ক্যান্সারে আক্রান্ত কিশোরের নেই কোনও ভাই-বোন। ফলে কেমোথেরাপিতে রোগ সেরে যাওয়ার পরে তিন বার লিউকেমিয়া ফিরে এলেও, অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করা যাচ্ছিল না ম্যাচিংয়ের অভাবে। অগত্যা ঝুঁকি নিয়েই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে মায়ের হাফ-ম্যাচ অস্থিমজ্জা দিয়েই প্রতিস্থাপন পর্ব সারা হলো সৌজ্যোতি রায় নামে চিৎপুরের ওই রোগীর।আপাতত সুস্থ ওই কিশোরকে বৃহস্পতিবারই ছুটি দিয়েছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের রক্তরোগ বিভাগ। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, আজকাল অধিকাংশ পরিবারেই মা-বাবার একটিমাত্র সন্তান। তাদের রক্তরোগের চিকিৎসায় তাই হাফ-ম্যাচ বা হ্যাপলো-আইডেন্টিক্যাল বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট নতুন আশার সঞ্চার করেছে। এমন প্রতিস্থাপন এর আগে একটিই হয়েছে রাজ্যে।
সেটি এনআরএস হাসপাতালে হয়েছিল। আর মেডিক্যালে এমন হাফ-ম্যাচ অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন হলো প্রথম বার। মেডিক্যাল সূত্রে খবর, প্রতিস্থাপনের আগে যে পদ্ধতিতে সৌজ্যোতির পুরোনো অস্থিমজ্জা নষ্ট করা হয়েছিল, তাতেও কাজে লাগানো হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি।
মেডিক্যালের রক্তরোগ বিভাগের প্রধান চিকিৎসক মৈত্রেয়ী ভট্টাচার্য জানান, ২০১৬ সালে সৌজ্যোতির অ্যাকিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া ধরা পড়ে। ব্লাড ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য মেডিক্যালের ইনস্টিটিউট অফ হেমাটোলজি অ্যান্ড ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হয় সে। চিকিৎসায় ধীরে ধীরে সেরেও ওঠে। কিন্তু ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ফিরে আসে ক্যান্সার।
তখনই চিকিৎসকরা ভেবেছিলেন, অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনই সেরা উপায়। কিন্তু সে সময়ে চলছিল করোনা কাল। ফলে মেডিক্যাল তখন কোভিড হাসপাতাল হিসেবে চলছে। যার জন্য বন্ধ ছিল অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন। সে যাত্রায় কেমোথেরাপির সাহায্যেই রোগকে বশ করা হয়। অসুখটা নিয়ন্ত্রণেই ছিল তার পর। কিন্তু কয়েক মাস আগে ফের লিউকেমিয়া বাড়াবাড়ি শুরু করে। তখন চিকিৎসকরা একরকম মনোস্থির করে ফেলেন অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের ব্যাপারে।
কিন্তু বাধ সাধে সৌজ্যোতির ভাই-বোন না থাকা। নিজের ভাই-বোন থাকলে তাদের শরীরের হিউম্যান লিউকোসাইট অ্যান্টিজেন (এইচএলএ) মিলিয়ে দেখা হয় রোগীর সঙ্গে। ১০-১২টি এইএলএ প্যারামিটার মিলে গেলেই ভালো ভাবে উতরে যায় প্রতিস্থাপন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা সম্ভব ছিল না।
অগত্যা অর্ধেক ম্যাচিং সত্ত্বেও কিছুটা ঝুঁকি নিয়েই মা সুমিতা রায়ের অস্থিমজ্জা থেকেই স্টেম সেল নিয়ে তা প্রতিস্থাপন করা হয় সৌজ্যোতির শরীরে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এমন হাফ-ম্যাচ বা হ্যাপলো-আইডেন্টিক্যাল বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট বেশ দুরূহ কাজ। কিন্তু সেটাও মেডিক্যালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কল্যাণে সফল ভাবে সম্ভব হয়েছে সৌজ্যোতির ক্ষেত্রে।