• সুশাসনে বাধা! বোসের বিরুদ্ধে আদালতে রাজ্য
    এই সময় | ১৩ জুলাই ২০২৪
  • এই সময়: রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ মামলায় ক’দিন আগেই আচার্য-রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য সরকারের ভূমিকা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ভিসি নিয়োগে রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য সরকারই। এবার রাজ্যের পাঠানো বিভিন্ন বিলে সই না-করে অনির্দিষ্ট কাল ফেলে রাখার অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টে গেল রাজ্য।রাজ্য সরকারের রিট পিটিশনে অভিযোগ করা হয়েছে, সংবিধানের ২০০ নম্বর অনুচ্ছেদ অগ্রাহ্য করে রাজ্যপাল তাঁর কাছে পাঠানো আটটি বিলে অনুমোদন না-দিয়ে ফেলে রেখেছেন এবং তার জন্য কোনও কারণও উল্লেখ করেননি। তাঁর এই ভূমিকা রাজ্যে সুশাসনের পথেও অন্তরায় তৈরি করেছে বলে অভিযোগ রাজ্যের।

    শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যের তরফে আইনজীবী আস্থা শর্মা আবেদন জমা দিয়ে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের এজলাসে মামলাটি তালিকাভুক্ত করার আর্জি জানান। রাজ্যের আবেদন বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন সিজেআই।

    একগুচ্ছ বিল রাজভবনে পাঠানো হলেও সেগুলি কোনও কারণ না-দর্শিয়ে রাজ্যপাল ফেলে রেখেছেন বলে এর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল অভিযোগ তুলেছে একাধিক বার। আবার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস যুক্তি দিয়েছেন, তাঁর কাছে কোনও বিল পড়ে নেই।

    বিধানসভার সচিবালয় থেকে যে বিলগুলি তাঁর কাছে পাঠানো হয়েছিল, সেগুলির বিস্তারিত ব্যাখ্যা চেয়ে তিনি রাজ্যের কাছে ফেরত পাঠিয়েছেন। এনিয়ে রাজনৈতিক টানাপড়েন চলার মধ্যেই এবার সুপ্রিম কোর্টে গেল রাজ্য। যদিও রাজ্যের আবেদনে যে আটটি বিলের উল্লেখ করা হয়েছে, তারমধ্যে ছ’টি বিল ২০২২-এর, যে সময়ে বাংলায় রাজ্যপাল ছিলেন জগদীপ ধনখড়। তিনি দেশের উপরাষ্ট্রপতি হয়ে দিল্লি চলে যাওয়ার পরে তাঁর চেয়ারে বসেন বোস।

    কিন্তু দু’বছর পেরিয়ে গেলেও বিলগুলিতে সিলমোহর দেননি রাজ্যপাল। অন্য দু’টি বিল বোস রাজ্যপাল থাকাকালীনই পাঠানো হয়েছিল রাজভবনে। পড়ে আছে সেগুলিও। ধনখড়ের সময়ে রাজ্য-রাজভবনের টানাপড়েন হলেও রাজ্য সরকার এতদিন আদালতের দ্বারস্থ হয়নি। বোসের জমানাতেও বিভিন্ন ইস্যুতে রাজ্য সরকারের সঙ্গে সংঘাত চলছে রাজভবনের। ক’দিন আগে তৃণমূলের দুই নবনির্বাচিত বিধায়কের শপথগ্রহণ নিয়েও দু’পক্ষের দড়ি টানাটানি হয়েছে।

    আবার রাজভবনে ‘শ্লীলতাহানি’র অভিযোগ তুলে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছেন নিগৃহীতা। উল্টোদিকে মুখ্যমন্ত্রী-সহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা তুলে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন বোসও। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে রাজ্য যে মামলা ঠুকেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে, তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

    রাজ্যের আবেদনে বলা হয়েছে, এই বিলগুলি ফেলে রেখে রাজ্যপাল গণতান্ত্রিক ও সুস্থ প্রশাসনকে পরাজিত ও ধ্বংস করার ভয় দেখাচ্ছেন। এই বিলগুলির মাধ্যমে সাধারণ নাগরিকদের জন্য যে কল্যাণমূলক প্রকল্পের অধিকারকে সুনিশ্চিত করার চেষ্টা হচ্ছিল, তাকেও বাধা দেওয়া হচ্ছে।

    গত কয়েক বছরে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকারের জমানায় রাজ্য বনাম রাজভবনের দ্বন্দ্বের ঘটনা শুধু বাংলাতেই হয়েছে, এমন নয়। তেলঙ্গানা, পাঞ্জাব, কেরালা, তামিলনাড়ুর মতো অবিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতেও সংঘাত চলছে সেখানকার রাজ্যপাল ও রাজ্য সরকারের মধ্যে। তেলঙ্গানার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, সংবিধানের ২০০ নম্বর অনুচ্ছেদ মেনে রাজ্যপালকে যত দ্রুত সম্ভব বিলগুলি ফেলে না-রেখে ফেরত দিতে হবে।

    পাঞ্জাবের ক্ষেত্রেও শীর্ষ আদালত বলেছিল, রাজ্যপাল শুধুমাত্র বিল আটকে রেখে আইনসভাকে উপেক্ষা করতে পারেন না। এই সব প্রসঙ্গও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। কেরালা ও তামিলনাড়ুতেও রাজ্যপাল অনেকগুলি বিল পড়ে থাকলেও কোনও ব্যবস্থা নেননি বলে শীর্ষ আদালতে মামলা হয়। সেক্ষেত্রেও রাজ্যপালের ভূমিকার সমালোচনা করেছে সুপ্রিম কোর্ট।

    রাজ্যের অভিযোগ, বিভিন্ন মামলায় সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশ জানার পরেও বাংলার রাজ্যপাল বিল আটকে রেখে একই পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছেন।
  • Link to this news (এই সময়)