হালকা জ্বরও হতে পারে ডেঙ্গির লক্ষণ, সতর্কতা স্বাস্থ্য দপ্তরের
এই সময় | ১৩ জুলাই ২০২৪
এই সময়: মৃদু জ্বর আর সঙ্গে ডায়েরিয়া? কিংবা পেটে মোচড় দেওয়া ব্যথা আর সঙ্গে হালকা জ্বর? অথবা তেমন জ্বরও নেই? তা হলেও কিন্তু ডেঙ্গি পরীক্ষা করিয়ে নেওয়াটাই ঠিক কাজ। অন্তত রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর তেমনটাই মনে করছে। এই মর্মে বৃহস্পতিবার সব হাসপাতালের উদ্দেশে নির্দেশিকা জারি করেছে স্বাস্থ্যভবন। কেননা, চলতি বছরের ডেঙ্গি বেশ কিছু আজব উপসর্গ সঙ্গে নিয়ে এসেছে।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গির চিরাচরিত উপসর্গ বা ক্ল্যাসিক্যাল সিম্পটম হলো ধূম জ্বর। সঙ্গে থাকে চোখের কোটরে ব্যথা, মাথা ব্যথা আর গাঁটে গাঁটে যন্ত্রণা। জ্বর চট করে ছাড়তেই চায় না প্রথম দিন তিনেক। এই উপসর্গ দেখেই চিকিৎসকরা ডেঙ্গি পরীক্ষা করান সর্বত্র। কিন্তু জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখানেই ডেঙ্গি ভাইরাস ফাঁকি দিচ্ছে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের চোখকেও।
মামুলি জ্বর ও পেট খারাপের মতো উপসর্গতেও যে ডেঙ্গি হামলা চালাতে পারে শরীরে, সে কথাটা তাই স্বাস্থ্যভবন মনে করিয়ে দিয়েছে সরকারি চিকিৎসকদের। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার সব জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং সব সরকারি মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ তথা
সুপারকে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী ও স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা কৌস্তভ নায়েক চিঠি দিয়েছেন।
তাতে বলা হয়েছে, এই পেট খারাপ ও মৃদু জ্বরের উপসর্গ দেখলে সব চিকিৎসকদের ডেঙ্গির এনএস-১ কিংবা আইজিএম এলাইজ়া টেস্ট লিখতে হবে প্রেসক্রিপশনে। তাঁদের মনে করিয়ে দিতে বলা হয়েছে যে, কোনও রোগী যদি পেট ব্যথা কিংবা ডায়েরিয়ার উপসর্গ নিয়ে আসেন, তা হলে তাঁর জ্বর হয়েছিল কিনা, তা খোঁজ নিতে হবে। এমনকী, জ্বর জ্বর ভাব থাকলেও ডেঙ্গি টেস্টের কথা ভাবতে হবে।
মশাবাহিত রোগ বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দী অবশ্য বলছেন, ‘এমন উপসর্গ আদৌ নতুন নয়। আগেও বহু দেখেছি। ডেঙ্গি সংক্রমণের ক্ষেত্রে উপসর্গের তালিকায় বরাবরই পেট খারাপকে রাখা হয়।’ স্বাস্থ্যকর্তারা যদিও জানাচ্ছেন, ডেঙ্গির অন্যতম উপসর্গ ডায়েরিয়া হলেও তার নজির খুব একটা দেখা যায় না। কিন্তু চলতি মরশুমে এমন নজির অনেকগুলি দেখা যাচ্ছে। সে জন্যই বাড়তি সতর্কতার জন্য এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে চিকিৎসকদের জন্য।
কেননা, রোজকার রোগী দেখার অভ্যাসের মাঝে ডেঙ্গির চালু উপসর্গগুলির কথাই মাথায় থাকে। তুলনায় কম গুরুত্ব দেওয়া হয় অপ্রচলিত উপসর্গগুলিকে। মাইক্রোবায়োলজির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তথা বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ আশিস মান্না বলেন, ‘ডেঙ্গি সংক্রমণের চরিত্র বেশ কয়েক বছর ধরেই একটু একটু করে বদলাচ্ছে। গত বছরেও ডায়েরিয়া ও পেট ব্যথার সঙ্গে মৃদু জ্বর অথবা একেবারে জ্বর না-থাকা রোগীদের শরীরেও ডেঙ্গি ধরা পড়েছিল। আর কোনও উপসর্গ না থাকলেও দেখা যাচ্ছিল, কারও কারও প্লেটলেটস-সহ অন্যান্য রক্ত উপাদানের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যাচ্ছে। এমন রোগীর সংখ্যা এ বছরেও দেখা যাচ্ছে তাই সাবধান হওয়াই ভালো।’
আশিস জানান, সে জন্যই স্বাস্থ্য দপ্তরের এই নির্দেশিকা একেবারেই সময়োচিত। কেননা, বর্ষা এসে যাওয়ায় ডেঙ্গির গ্রাফ আগের চেয়ে একটু হলেও তুলনায় বেশি ঊর্ধ্বমুখী। তাই বেসরকারি চিকিৎসকদেরও এই নির্দেশিকার কথা মাথায় রাখা জরুরি। কেননা, জুন পর্যন্ত রাজ্যে ১৪৫০ জন ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছেন এ বছর। তার মধ্যে শেষ এক সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা ১২৯ জন।