• বাংলা ভাষার প্রশ্নেই বানানের দফারফা, 'কেউ দেখলেন না কেন?' প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষাবিদরা...
    আজকাল | ১৩ জুলাই ২০২৪
  • রিয়া পাত্র

    এই ঘটনা প্রথম নয়। এ রাজ্যেই বাংলা ভাষার প্রশ্ন দেখে আগেও চক্ষু চড়কগাছ হয়েছে আমজনতার। তবে এবার প্রশ্ন পড়তেই নাজেহাল অবস্থা। জোর চর্চা দমদমের সেন্ট স্টিফেন্স স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির প্রশ্ন নিয়ে। প্রশ্ন হাতে পেয়ে ঝুঁকে পড়েও শব্দ উদ্ধার করতেই নাকানিচোবানি পড়ুয়াদের। পড়ে একই হাল অভিভাবকদের এবং তারও পরে সমাজমাধ্যমে যাঁরা পড়েছেন, তাঁদের।

    ঘটনা কী? সেন্ট স্টিফেন্সের দ্বিতীয় ভাষা ‘বাংলা’র ২০ নম্বরের পরীক্ষা ছিল। তার জন্য সময় দেওয়া হয়েছিল ৩০ মিনিট। তবে প্রশ্নপত্রে যা কিছু লেখা ছিল, সমস্যা সেসব নিয়েই। পরীক্ষার্থীদের শব্দার্থ, পদ পরিবর্তন এবং বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু লক্ষ করলে দেখা যাবে, প্রতিটি যুক্তাক্ষর ভেঙে গিয়েছে। অর্থাৎ ‘উন্মাদ’ শব্দের ন এবং ম কিংবা ‘প্রশ্ন’ শব্দের প-র-শ-ন সবকটি শব্দ পাশাপাশি বসে, পৃথকভাবে। সঙ্গেই ন, র, শ-তে হসন্ত রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই এই প্রশ্ন পড়তে হিমশিম পড়ুয়ারা। প্রশ্ন উঠছে একাধিক বিষয়ে, এক ভাষার প্রশ্নে, আরও স্পষ্ট বলতে গেলে, কোনও প্রশ্নেই এই ভুল কেন থাকবে? দুই, এটি বানান ভুল, নাকি প্রযুক্তিগত সমস্যা? তিন, ভুল নাকি নিছক বাংলাভাষা নিয়ে অবহেলা?

    স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও, উত্তর মেলেনি। এই প্রসঙ্গে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার বলছেন, ‘সমস্যা হয়েছে দুটো জায়গায়। এক, যিনি টাইপ করেছেন, হতে পারে তিনি টাইপ করতে পারেন না, বা অজ্ঞ। তিনি বাংলার যুক্তব্যঞ্জন লিখতে পারেন না। অর্থাৎ অযোগ্য লোককে দিয়ে টাইপ করানো হয়েছে। দ্বিতীয় সমস্যা হয়েছে, যাঁর এই প্রশ্নগুলি দেখার কথা, তিনি একবার চোখ বুলিয়ে দেখেননি।‘ কিন্তু এক স্কুলের পরীক্ষার প্রশ্নের ক্ষেত্রে কি এই ঘটনা কাম্য? বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ বলছেন, ‘এই ঘটনায় আসলে ভুল বার্তা যায়। বার্তা যায় অবহেলা করা হচ্ছে বাংলার হচ্ছে। যা সাধারণভাবে হওয়া উচিত নয়।’

    বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, অধ্যাপক অভীক মজুমদার গোটা ঘটনায় রীতিমত ক্ষুব্ধ। বিদেশ থেকেই ক্ষোভ উগরে দিয়ে বললেন, ‘আমি গোটা ঘটনায় রীতিমতো বিরক্ত, বলতে পারেন ক্ষুব্ধ। আমার এই বিষয়ে তিনটে কথা বলার আছে। প্রথমত, ফোনেটিক্স দিয়ে কোনও ভাষার প্রশ্ন করার রীতি আছে কি? দ্বিতীয়ত, এই যে প্রশ্নের প্রতিটি যুক্তব্যঞ্জন ভেঙে যাচ্ছে, ‘উত্তর দাও’-এ ‘ত’-এ হসন্ত, দিয়ে আবার ‘ত’। এভাবে দেখলে সেটা শিশুর পক্ষে ভাষা সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট করে না, উল্টে জটিল করে। আমার সোজা কথা, যদি বাংলা শেখাতেই হয়, তাহলে এই ধরনের ভেঙে যাওয়া আকার প্রকার দিয়ে শেখানো যায় না। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, এই ‘ভুল’ প্রশ্নপত্রে হবে কেন? বিরক্তির বিষয়, কেউ একবার দেখলেন না?’ তাঁর ক্ষোভ শিক্ষাব্যবস্থা নিয়েও। বললেন, ‘এটা একটা শিক্ষাব্যবস্থা চলছে। জানি না স্কুলটি কোন বোর্ড। আইসিএসই, সিবিএসই বোর্ড বড় বড় কথা বলে। অথচ যে রাজ্যে তাদের বোর্ড চলছে, সে রাজ্যের ভাষাকে অপমান করে, সে রাজ্যের ভাষা-মানুষের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি অপমান-অসম্মানজনক। উদ্বিগ্ন শিক্ষাবিদ কড়া পদক্ষেপ, শাস্তি চান কর্তৃপক্ষের। সাফ জানালেন, 'সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, বোর্ডের প্রধান, কেন্দ্রের শিক্ষার দায়িত্বের যাঁরা আছেন, এই বিষয়টি নিয়ে অতিদ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হক। প্রয়োজনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’

    দীর্ঘদিন ধরে হরফ-মুদ্রণ নিয়ে চর্চা করছেন সুস্নাত চৌধুরী। যেহেতু গোটা বিষয়ের মূলে হরফের সমস্যা, বিস্তারিত জানতে কথা বলা গেল তাঁর সঙ্গে। তাঁর মতে, সমস্যা অতি সাধারণ, এড়ানো যেত একটু ওয়াকিবহাল হলেই। বললেন, ‘ফন্ট ব্যবহারে মূল সমস্যা হয়েছে। যে ডিফল্ট ফন্ট ব্যবহার হয়েছে, তাতে ওই যুক্তাক্ষরগুলো নেই। তাতেই ঘটেছে এই বিপত্তি। মূলত যে সফটওয়্যারে করা হয়েছে, সেখানে রেন্ডারিং-এর সমস্যা হয়েছে।’ সেক্ষেত্রে সমাধান কী? জানালেন, ‘এক্ষেত্রে সমস্ত টেক্সটকে যে কোনও ইউনিকোড ফন্টে নিলেই এই সমস্যা হত না। আসলে এখানে মূল সমস্যা হয়েছে নজর না দেওয়া। একবার যদি প্রিন্টের পর কেউ পড়ে দেখতেন, তাহলেই সহজে এড়ানো যেত।’
  • Link to this news (আজকাল)