বগটুই গণহত্যা মামলার চার্জগঠন, কড়া শাস্তির দাবি স্বজনহারাদের
বর্তমান | ১৩ জুলাই ২০২৪
সংবাদদাতা, রামপুরহাট: প্রায় আড়াই বছর পর বগটুই গণহত্যা মামলায় মূল অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা আনারুল হোসেন সহ মোট ২৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠিত হল। শুক্রবার রামপুরহাটের ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক সন্দীপকুমার কুণ্ডুর এজলাসে এই চার্জগঠিত হয়। এবার শুরু হবে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব। সিবিআইয়ের আইনজীবী পার্থ তপস্বী বলেন, ‘এদিন ২৩ জন অভিযুক্তর উপস্থিতিতে চার্জ গঠন হয়েছে। আগামী ১২ ও ১৩ আগষ্ট সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য হয়েছে।’ অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছেন স্বজন হারানো পরিবারের সদস্যরা।
২০২২ সালের ২১ মার্চ বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখকে বোমা মেরে খুন করার অভিযোগ ওঠে। পরে ভাদুর অনুগামীরা বগটুই গ্রামে একাধিক ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে। প্রতিটি বাড়িতে দরজা বন্ধ করে আগুনও ধরিয়ে দেওয়া হয়। তাতে জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় ১০ জনের। সেই ঘটনার তদন্তে প্রথমে সিট গঠন করা হয়। পরে আদালতের নির্দেশে তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পর্যায়ক্রমে ২৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যেই সিবিআই হেফাজতে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় ভাদুর ডানহাত লালন শেখের। অভিযুক্তদের মধ্যে দু’জন নাবালক ছিল। তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। আদালতে অভিযুক্তদের নামে চার্জশিটও জমা করে সিবিআই।
আদালত সূত্রের খবর, এর আগে একাধিকবার চার্জ গঠনের দিন ধার্য হলেও সব অভিযুক্তকে পুলিস আদালতে হাজির করাতে পারেনি। তাই, চার্জ গঠন পিছিয়ে গিয়েছে। এরপরই হাইকোর্ট এই মামলার দ্রুত চার্জ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব শুরু করার নির্দেশ দেয়। সেই মতো গত ২১ জুনও মামলার চার্জ গঠনের চূড়ান্ত দিন ধার্য হয়েছিল। কিন্তু জাহাঙ্গির শেখ ও মফিজুল শেখ নামে দুই অভিযুক্তকে বর্ধমান জেল থেকে রামপুরহাট আদালতে হাজির করাতে পারেনি পুলিস। পিছিয়ে যায় চার্জ গঠনের প্রক্রিয়া। ওইদিনই রামপুরহাট আদালত ১২ জুলাই চার্জ গঠনের দিন ধার্য করে।
এদিন সকাল সাড়ে দশটার মধ্যে ২১ জন অভিযুক্তকে নিয়ে আদালতে হাজির হয়ে যায় পুলিস। বাকি দুই অভিযুক্ত বর্ধমান জেল থেকে না আসায় কোর্ট চত্বরে জল্পনা ছড়ায়, এদিনও বগটুই মামলার চার্জ গঠনের সম্ভাবনা নেই। অবশেষে পৌনে একটা নাগাদ পুলিস জাহাঙ্গির ও মফিজুলকে এজলাসে হাজির করায়। এরপরই চার্জ গঠন হয়। এদিন অভিযুক্তদের অনেকের পরিবারের সদস্যরা আদালতে হাজির ছিলেন। এর আগে ২১ জুন অভিযুক্ত আনারুল হোসেন তার আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের আবেদন জানালেও তা নাকচ করে দেয় আদালত। আনারুলের আইনজীবী আনন্দশংকর রায় বলেন, ‘এদিন জামিনের কোনও পিটিশন আদালতে জমা করা হয়নি। আমরাও চাইছি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ তাড়াতাড়ি শুরু হোক।’ স্বজনহারা কিরণ শেখ বলেন, ‘মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করে অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করুক আদালত। যারা নৃশংস হত্যালীলা চালিয়েছে, তাদের কেউ যেন ছাড়া না পায়।’