দুর্গাপুরে পরিত্যক্ত আবাসনে হাত বেঁধে বাবাকে ফেলে রাখল ছেলেরা, চাঞ্চল্য
বর্তমান | ১৩ জুলাই ২০২৪
সংবাদদাতা, দুর্গাপুর: ডেঙ্গু নিয়ে সচেতনতার কাজ করতে গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা একটি পরিত্যক্ত আবাসন থেকে হাত-পা বাঁধা এক অসুস্থ বৃদ্ধকে উদ্ধার করলেন। শুক্রবার ঘটনাটি ঘটেছে দুর্গাপুর পুরসভা এলাকায়। উদ্ধারের ঘটনার পর বৃদ্ধের পুত্রদের বিরুদ্ধে অমানবিকতার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের (ডিএসপি) পরিত্যক্ত আবাসন দখল করে বৃদ্ধ বাবাকে ফেলে রেখেছে তাঁর ছেলেরা। অভিযোগ অস্বীকার করে এক ছেলের অবশ্য দাবি, বাবার চিকিৎসা হয়েছিল। যাতে পড়ে না যান তার জন্য হাত-পা বাঁধা ছিল। ঘটনাস্থলে যান প্রাক্তন কাউন্সিলার। যায় দুর্গাপুর থানার পুলিস। বৃদ্ধকে উদ্ধার করে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠায়। বৃদ্ধের নাম, মাগারাম ঘোষ (৮২)।
এদিন সকালে অমানবিক ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে দুর্গাপুর স্টিল টাউনশিপের জয়দেব অ্যাভিনিউ এলাকায়। একটি দু’তলা আবাসনে ডেঙ্গু সচেতনতার কাজে গিয়েছিলেন পুরসভার দুই মহিলা স্বাস্থ্যকর্মী। তাঁরা একটি ঘরের ভেতর থেকে মানুষের গোঙানির শব্দ পান। সন্দেহ হওয়ায় ডাকাডাকি শুরু করেন। ঘরের ভিতরেও ঢোকেন। সেখানেই বৃদ্ধকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় একটি খাটে শুয়ে থাকতে দেখেন। খাটটিতে প্লাস্টিক পাতা। মানুষটির পরণে কোনও কাপড় ছিল না। কথা বলতে পারছিলেন না। ঘরের ভেতরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। স্বাস্থ্যকর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করতে এলাকার বাসিন্দাদের খবর দেন।
তাপসী দাস নামে এক স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, এমন অমানবিক দৃশ্য দেখে শিউরে উঠেছিলাম। জিজ্ঞাসা করলাম, ভালো আছেন। বহু কষ্টে তিনি জানান, ভালো নেই। আমরা প্রতিবেশিদের বিষয়টি জানাই। তার পর মাগারামবাবুর এক ছেলেকে এলাকাবাসীরা ফোন করেন।’ সোনালি ধর নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘প্রায় পাঁচ মাস ধরে বৃদ্ধ এখানে একাই থাকছেন। মাঝেমধ্যে ছেলেদের আসতে দেখেছি। ছেলেরা দুর্গাপুরের অন্য কোনও জায়গায় থাকেন।’ প্রাক্তন কাউন্সিলার মণি দাশগুপ্ত বলেন, ‘অমানবিক ঘটনা। মাগারামবাবু অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। তাঁর চণ্ডীদাস এলাকায় নিজস্ব বাসস্থান আছে। স্ত্রী মৃত। তাঁর তিন ছেলে। একজন অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টে চাকরি করেন। বাকিরা বেসরকারি সংস্থার কর্মী।’ তিনি জানান, বড় ছেলে দয়াময় ঘোষ এসেছিলেন। তিনি বলে গিয়েছেন, বাবাকে ঘরে রাখা যাবে না। পুলিস ও দুর্গাপুর মহকুমাশাসককে খবর দেওয়া হয়েছে। মাগারামবাবুকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রশাসন বিষয়টি দেখবে।’ আর মাগারামবাবুর পুত্র দয়াময় বলেন, ‘ডিএসপি’র এই আবাসনটি দখল করা হয়েছে। বাবা এখানেই থাকতেন। তাঁর চিকিৎসা হয়েছে। তাই যাতে পড়ে না যান তার জন্য বেঁধে রাখা হয়েছে। সংসারের অবস্থা খারাপ। অমানবিক কিছুই না।’