কুনুর নদীতে ধেয়ে এল ফেনার পাহাড়, ছবি তুলতে হুড়োহুড়ি
বর্তমান | ১৩ জুলাই ২০২৪
সংবাদদাতা, দুর্গাপুর: বৃহস্পতিবার থেকে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। আর তারই মধ্যেই নজিরবিহীন দৃশ্য দেখল শিল্পাঞ্চলবাসী। যেন তুষারের পাহাড় ধেয়ে আসছে দুর্গাপুরের কুনুর নদীর জলে ভেসে। অবাক করা সেই দৃশ্য দেখতে ওই দিন থেকেই এলাকাবাসী দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের ধবনী এলাকায় ভিড় করেন। নজিরবিহীন দৃশ্য মোবাইল ক্যামেরায় বন্দি করতে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় বেসরকারি গ্যাস উত্তোলনকারী সংস্থার বর্জ্য ও বিষাক্ত জল নদীর জলে মিশ্রিত হয়ে ফেনার পাহাড়ের রূপ নিচ্ছে। অতীতে ওই সংস্থার বর্জ্য জলে ক্ষতিগ্রস্ত হন চাষিরা। গবাদিপশুও মারা গিয়েছিল। তাঁদের দাবি, কেন নদীর জল বিষাক্ত হয়েছে, অবিলম্বে প্রশাসন তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিক। ঘটনাস্থলে আসেন প্রতাপপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সীতারাম রুইদাস। তিনি নদীর জল পরিদর্শন করে ব্লক প্রশাসনকে জানান।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কুনুর নদী দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের ঝাঁঝরা এলাকার ভূগর্ভ থেকে উৎপন্ন হয়েছে। ওই নদীর জল এলাকার মানুষ পানীয়জল হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। কুনুর নদী নালার মতো হলেও নদী নামেই পরিচত। ওই নদীর জলে দুর্গাপুর-ফরিদপুর ও কাঁকসা, আউশগ্রাম-২ ব্লক সহ একাধিক এলাকার চাষিদের সেচের একমাত্র ভরসা। দুর্গাপুর-ফরিদপুর ও কাঁকসা ব্লকে বহু বছর ধরে একটি বেসরকারি সংস্থা ভূগর্ভস্থ মিথেন গ্যাস উত্তোলন করছে। গ্যাস উত্তোলনের সময় ভূগর্ভস্থ বিষাক্ত জল মাটির ওপরে উঠে আসছে। ওই বিষাক্ত জল নালা ও নদী সহ কোনও চাষের জমিতে ফেলা নিষিদ্ধ। সংস্থাও সেই মতো ওই জল পরিশুদ্ধ করে। তবে অতীতে ওই বিষাক্ত জল কুনুর নদীতে ফেলার অভিযোগ উঠেছিল। তাতে চাষের জমি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ওই নদীর জল খেয়ে গবাদিপশুদের মৃত্যুও হয়েছিল। একাধিক ক্ষতি হওয়ার পরে প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। প্রতি মাসেই গ্যাস উত্তোলনকারী সংস্থার বিষাক্ত জলের ওপর দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড নজরদারি করে। এছাড়াও কুনুর নদী সংরক্ষণের জন্য একটি কমিটিও গঠন করেছেন এলাকাবাসীরা।
এদিনে সাদা ফেনা কুনুর নদীর জলে ভরে যাওয়ায় এলাকাবাসী দাবি করেন, গ্যাস সংস্থার দূষিত জলের কারণে হচ্ছে। এলাকাবাসী শ্রীকান্ত কুণ্ডু, শ্রীকান্ত হাজরা ও দেবব্রত সাহা বলেন, কুনুর নদীতে এই রকম ফেনা হতে কখনও দেখা যায়নি। বিরল দৃশ্য দেখতে এসেছি। জল বিষাক্ত হয়ে গিয়েছে। এখানে গ্যাস উত্তোলন সংস্থা রয়েছে। ওই সংস্থার বর্জ্য মিশ্রিত জল নদীতে ফেলা হয়েছে বলে অনুমান করছি। অতীতে ওই বিষাক্ত জলের জন্য চাষের ক্ষতি হয়েছে। মাছ মরে গিয়েছে।