এদিন এই মামলার শুনানি পর্বে বিচারপতি জানিয়েছেন , -‘স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ তদন্ত এবং বিচারের স্বার্থে এখনই সমস্ত তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে। সুন্দরবনের পুলিশ সুপার সমস্ত সাক্ষীদের এবং পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করবেন, যেন তাঁদের হুমকি দেওয়া না হয়। ওই থানার আইসি মানস চট্টোপাধ্যায়কে এই তদন্তের অংশ করা যাবে না’। একজন চিকিৎসকের উপস্থিতিতে ময়নাতদন্ত হয়েছে। ময়নাতদন্তের সময় পরিবারের কেউ ছিলেন সেই মর্মে প্রমাণ নেই। ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত ছিলেন না।এর পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য আদালতকে জানায়, -‘ঢোলাহাটের ঘটনায় ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। কোনও ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ময়নাতদন্ত হয়নি, কিন্তু ভিডিও রেকর্ডিং করা হয়েছে’। এরপর বিচারপতি বলেন, -‘ ম্যাজিস্ট্রেট কেন ছিলেন না? কেন পরিবারের লোককে জানানো হয়নি? গাইডলাইন মেনে ময়নাতদন্ত করা হয়নি বলে অভিযোগ করা হচ্ছে’।
বিচারপতি বলেন, -‘যদি নিয়ম মেনে ময়নাতদন্ত না হয়, তাহলে যথাযথ তদন্তের পথে রাজ্য বাধা সৃষ্টি করতে পারে না’। ঢোলাহাটের ঘটনায় প্রশ্নের মুখে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালের ভূমিকাও। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জন্ডিসের কথা বলা নেই। অথচ গত ৪ জুলাই যখন প্রথমবারের জন্য নিহত যুবককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তখন তিনি শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ ছিলেন। তবে গত বৃহস্পতিবার রাজ্য জানিয়েছিল, -‘এই বেসরকারি হাসপাতাল জানিয়েছে, যে মৃত যুবক জন্ডিসে আক্রান্ত ছিলেন’। বিচারপতির প্রশ্ন,-‘ হাসপাতালকে মামলায় পার্টি করা হয়েছে?’ তাই ঢোলাহাটে যুবকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
আদালত জানিয়েছে, -‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের গাইড লাইন মেনে নীলরতন সরকার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে আবু সিদ্দিক হালদারের দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত করতে হবে।একই সঙ্গে পুলিশকে এক বেসরকারি নার্সিংহোমের ভূমিকাও খতিয়ে দেখতে বলেছে আদালত।ঘটনার সূত্রপাত গত ৩০ জুন। ওইদিন মৃত আবু সিদ্দিক হালদারের কাকা মহসিন হালদারের বাড়ি থেকে সোনার গয়না চুরি হয়। তিনি পুলিশে অভিযোগ জানান। পরের দিন অর্থাৎ ১ জুলাই ঢোলাহাট থানার পুলিশ মহসিন হালদার ও তাঁর ভাইপো আবু সিদ্দিককে থানায় তুলে নিয়ে যায়। অভিযোগ, মহসিনকে দিয়ে জোর করে ভাইপোর নামে চুরির অভিযোগ লিখিয়ে নেওয়া হয়। এমনকী মহসিনের সামনেই তাঁর ভাইপো আবুকে দফায় দফায় মারধর করা হয়। ৪ জুলাই কাকদ্বীপ মহকুমা আদালত থেকে জামিন পান আবু। গুরুতর অসুস্থ আবুকে পার্কসার্কাসের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হলে ওই দিন রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। পরিবারের অভিযোগ, -‘পুলিশের মারেই জখম হয়ে মৃত্যু হয়েছে ওই যুবকের’।
আদালতে পুলিশ এদিন জানায়, -‘যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় ইতিমধ্যে থানার আইসি মানস চট্টোপাধ্যায় ও তদন্তকারী অফিসার রাজদীপ সরকারের বিরুদ্ধে মারধর, তোলাবাজির অভিযোগে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। থানার পুলিশ নয়, খুনের মামলার তদন্ত করছেন ডিএসপি। তাছাড়া পুলিশ যে সব তথ্য দিচ্ছে তা হাসপাতাল ও ময়না তদন্তকারী চিকিৎসকের’।যা শুনে বিচারপতির প্রশ্ন, “ময়নাতদন্তের ভিডিও রেকর্ডিং হলেও ম্যাজিস্ট্রেটকে রাখা হয়নি কেন? এত তাড়া কিসের ছিল? বাড়ির লোককেও কেন জানানো হয়নি?” নিহত পরিবারের আইনজীবী আদালতে বলেন, -‘জাতীয় মানবাধিকার গাইড লাইন অনুযায়ী হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগ উঠলে তিনজন ময়নাতদন্তকারী অভিজ্ঞ চিকিৎসককে নিয়ে কমিটি গড়তে হবে। তারা তিনটি পৃথক প্রতিষ্ঠান থেকে হতে হবে। এখানে সেসব কিছু মানা হয়নি। পুলিশ এফআইআর করলেও সেখানে সব ধারা প্রয়োগ করা হয়নি’।
রাজ্যের তরফে দাবি করা হয়, “মাথায় রাখতে হবে এই মৃত্যু কিন্তু পুলিশের হেফাজতে হয়নি। মাত্র কয়েক ঘণ্টা সেই ধৃত থানার হেফাজতে ছিল। মৃত্যুও হয়েছে জামিনে মুক্তির পরে।” মৃত যুবকের পরিবারের আইনজীবী আদালতে বলেন, -‘পর্যবেক্ষণ, তথ্য প্রমাণ জোগাড় ও স্বচ্ছ তদন্তের স্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে নথি জোগাড় করা দরকার। আর তাই দ্বিতীয় ময়না তদন্ত করা জরুরি’।এরপরই কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ জানায়, -‘শনিবারের (আজ) মধ্যে ওই যুবকের দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত করতে হবে। একই সঙ্গে মৃত যুবকের ভিসেরার নমুনা (সিএফএসএল) হায়দ্রাবাদে পাঠাতে হবে’। আগামী ২২ জুলাই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে । ওই দিন পুলিশকে দ্বিতীয় ময়না তদন্তের রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সিঙ্গেল বেঞ্চ। এর পাশাপাশি পুলিশকে মৃতের কাকা-সহ পরিবারের লোকেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে বলে জানা গেছে।