পিএইচডিতে ভর্তির জট কাটার ইঙ্গিত, শুরু ‘কমরেড বিক্রম’কে হুগলি থেকে বর্ধমান পাঠানোর প্রক্রিয়া
প্রতিদিন | ১৩ জুলাই ২০২৪
স্টাফ রিপোর্টার: জেলবন্দি মাওবাদী ছাত্র অর্ণব দাম ওরফে কমরেড বিক্রমকে পিএইচডিতে ভর্তি নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা কাটার ইঙ্গিত মিলল শুক্রবার। রাজ্যের শিক্ষাবিদ-প্রশাসনিক মহলের পাশাপাশি জনমতও অর্ণবের পক্ষে জোরালো দাবি তোলায় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ও তাঁকে ভর্তির প্রক্রিয়া শিথিল করার কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে সূত্রের খবর। অন্যদিকে, এদিনই কারা দপ্তরও তাঁর পড়াশোনা-গবেষণায় সাহায্য করতে হুগলি থেকে বর্ধমান জেলে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে। ভর্তি জটিলতা কাটার ইঙ্গিত মিলতেই এদিন হুগলি জেলের ভিতরে শুরু করা অনশন স্থগিত করে দিয়েছেন অর্ণব দাম। শুধু তাই নয়, সাজাপ্রাপ্ত বন্দি হওয়ায় এদিনও তিনি হুগলি জেলের ওয়েলফেয়ার বিভাগে দীর্ঘক্ষণ ছিলেন।
সূত্রের খবর, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে গবেষণার কাজে প্রয়োজনীয় সুবিধা পেতে এডিজি (কারা)-র কাছে নির্দিষ্ট আবেদন করার জন্য বার্তা গিয়েছে অর্ণব দামের কাছে। এদিকে এদিনই কারামন্ত্রী অখিল গিরি জানিয়েছেন, “ইতিহাস নিয়ে গবেষণার কাজে অর্ণব দামকে সুবিধা দিতে বর্ধমান জেলে পাঠাতে কারা দপ্তরে কোনও সমস্যা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে দুটি বিষয় জানতে চাওয়া হয়েছে, তার উত্তর সোমবারই তারা পেয়ে যাবে। আর নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে সেটি আমরা দেখে নেব। বর্ধমান জেল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পড়াশোনা ও গবেষণার কাজে সুবিধা হবে বলেই এটা করা হচ্ছে। আসলে আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর ভাবনা, যাঁরা পড়তে চান, তাঁদের পড়তে দিতে হবে।”
এদিনও অর্ণবের পিএইচডিতে ভর্তি দ্রুত করার আবেদন জানিয়ে তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ বলেন, “আমরা অর্ণবের মুক্তির দাবি করছি না, সেটা আইনি লড়াই, সে-ই বুঝে নেবে। আমরা প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম হওয়া, মেধার যোগ্যতার পরিচয় দেওয়া একজন ছাত্রের পড়াশোনার পক্ষে সওয়াল করছি। আমরা চাই জেলে বসেই নিজের মেধার মাধ্যমে অর্ণব পিএইচডি করুক।” কারা দপ্তরের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগও অর্ণবকে যাবতীয় সাহায্য করতে প্রস্তুত আছে বলে এদিনও ফের জানিয়ে দিয়েছে। যাঁর সিদ্ধান্ত ঘিরে গত দুদিন ধরে অর্ণবের পিএইচডিতে ভর্তির ক্ষেত্রে অনাবশ্যক ‘জটিলতা’ সৃষ্টি এবং এত বিতর্ক, সেই উপাচার্য গৌতম চন্দ্র এদিন সাংবাদিকদের কাছে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। উপাচার্যর কথায়, “বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অর্ণব দামের পিএইচডি জন্য ভর্তির বিষয়ে সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। নিরাপত্তার বিষয়ে সুনিশ্চিত হলেই বাকি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। প্রথম স্থানাধিকারীকে বাদ দিয়ে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব হয়নি। যারা এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছেন তঁারা সম্পূর্ণ তথ্য না জেনে মন্তব্য করছেন। এই ধরনের অভিযুক্তের ক্ষেত্রে জেল কর্তৃপক্ষের ‘নো-অবজেকশন’ থাকা স্বাভাবিক।”
এখানেই শেষ নয়, অর্ণব দামের গবেষণার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষের দাবি নিয়েও এদিন মন্তব্য করেন উপাচার্য। বলেন, “কুণালবাবুকে নিশ্চয়ই কেউ সঠিক তথ্য দেয়নি, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক রীতি ও নীতির তথ্য তুলে আমি দুটি প্রশ্নের উত্তর চেয়েছি, অর্ণবের ভর্তির বিরোধিতা করিনি।” অবশ্য এদিনও কুণাল ঘোষ ফের অর্ণবের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, “উপাচার্যকে সম্মান জানিয়ে বলছি, অবিলম্বে প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম হওয়া ছাত্রের ভর্তির ব্যবস্থা করুন, নইলে অন্য ছাত্রদেরও পড়াশোনার সময় নষ্ট হচ্ছে। অযথা বিতর্ক চলায় পঠনপাঠনে বিলম্ব হচ্ছে। আলোচনা করে সময় নষ্ট হচ্ছে।”